বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। দুর্নীতিবিরোধী একটি ফৌজদারি তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের এই ‘ফ্রিজিং অর্ডার’ জারি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
জব্দ হওয়া সম্পদগুলোর একটি অবস্থিত লন্ডনের অভিজাত ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ারে, যার মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটি টাকার বেশি)। অন্যটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে অবস্থিত, যার মূল্য ১২ লাখ পাউন্ড (সাড়ে ১৯ কোটি টাকা)। দুটি অ্যাপার্টমেন্টই আইল অফ ম্যান-ভিত্তিক অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়।
এনসিএ এক বিবৃতিতে জানায়, “চলমান একটি ফৌজদারি তদন্তের আওতায় আমরা এই দুটি সম্পত্তি জব্দের আদেশ পেয়েছি। এর বাইরে আপাতত আর কিছু বলার নেই।”
এদিকে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন সংক্রান্ত নথি থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এক সময় গ্রেশাম গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তবে বর্তমানে তিনি সেখানে আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, “সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে শায়ান এফ রহমান অর্থপাচার ও আত্মসাতের মামলায় সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছেন।”
অন্যদিকে শায়ান রহমানের মুখপাত্র দাবি করেন, “আমাদের মক্কেল জোরালোভাবে সব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাজ্যে যদি কোনো তদন্ত হয়, তিনি তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।” মুখপাত্র আরও বলেন, “বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত শেখ রেহানা বা সালমান এফ রহমানের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ, বিচারব্যবস্থা ও গণমাধ্যমসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এখন তা সংস্কারের উদ্যোগ চলছে।”
ইতোমধ্যে এই সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বহু সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। মে মাসেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। সমর্থকরা একে রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখলেও, সরকার বলছে, “এই অভিযান দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে।”
তদন্তের বিস্তৃতিতে শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের নামও উঠে আসে। যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে জানুয়ারি মাসে তিনি ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকে পদত্যাগ করেন ‘সুনাম রক্ষার স্বার্থে’।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এ.জে