ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পেরোলেও এখন পর্যন্ত তার ভিসেরা রিপোর্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ার কথোপকথন হাতে পায়নি তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যার ফলে তদন্ত কার্যক্রম ‘কিছুটা’ ব্যাহত হচ্ছে বলেও ভাষ্য কমিটির। সাজিদের মৃত্যুর পর থেকেই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার দাবি এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তদন্ত কমিটির কাজের মন্থর গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১৭ জুলাই শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুরে সাজিদ আবদুল্লাহ লাশ ভেঁসে ওঠে। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারন উদঘাটনে পরদিনই (১৮ জুলাই) ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। আগামী শনিবার (০২ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটিকে বেঁধে দেওয়া মেয়াদ শেষ হবে। তবে তারা এখনো সম্পূর্ণ তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের গত মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিতে চলা আন্দোলনে আগামী রোববারের (০৩ আগস্ট) মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের আশ্বাস দেন ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানিয়েছে, কমিটি গঠনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রয়োজনীয় অনেকেরই সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন তারা। তাছাড়া সচল ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ পর্যালোচনাও করছেন। এখনও পর্যন্ত সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্ত রিপোর্ট, কয়েকটি ক্যামেরার ফুটেজ ও সাজিদের কল লিস্ট তারা হাতে পেয়েছেন। তবে ভিসেরা রিপোর্ট ও সাজিদ সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়ার কথোপকথন ও পোস্টসহ প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য এখনো হাতে পায়নি তদন্ত কমিটি।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা সাজিদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অনেকের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে এবং ক্রস চেক করা হচ্ছে। তাছাড়া সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্ত রিপোর্ট, কিছু সিসিটিভি ফুটেজ ও সাজিদের কল লিস্ট অফিসিয়ালি হাতে পেয়েছি। আমরা এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো। অন্যান্য তথ্যগুলো পেলে তদন্তে আরো সহায়তা হতো। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ভিসেরা রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার কথোপকথন চেক করার জন্য তার মোবাইল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটিরও কোনো ধরনের আপডেট আমরা এখনো হাতে পাইনি।
প্রসঙ্গত, সাজিদকে সর্বশেষ ক্যাম্পাসে দেখা যাওয়ার পর থেকে পুকুরে লাশ ভেঁসে ওঠার মধ্যে প্রায় ২৬ ঘন্টায় তার ফোনে মোট পাঁচবার কল রিসিভ হয়। তার ফোনে এসব কল তারই তিনজন সহপাঠী ইমরান জাহান, নুসরাত জাহান ঐশী ও ইনসানুল ইমাম করেছিলেন বলে দাবি তাদের। তবে কল রিসিভ হলেও অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে দাবি কলদাতাদের। সর্বশেষ এ ঘটনা আলোচনায় আসলে ক্যাম্পাসে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে গত বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধায় ওই ২৬ ঘন্টার মধ্যে সাজিদের নাম্বারে কল দেওয়া তারই বন্ধু ইনসান নিজের ফোন হ্যাক হয়েছে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেসময় তিনি দাবি করেন— সাজিদের সঙ্গে তার কল হিস্ট্রি এবং গ্যালারি থেকে সাজিদ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্ক্রিনশট ডিলিট হয়ে গেছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে