মিশরের সুপ্রাচীন ইসলামি বিদ্যাপীঠ, ইলমের কা’বা খ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি অর্জন করেছেন ১১৯ জন মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এবারের এই সংখ্যা পূর্বের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক দফতর সম্প্রতি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়াসহ মোট ৬৫টি দেশের ৮৮৪ শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশের ১১৯ শিক্ষার্থীর অর্জন নজরকাড়া সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা উপভোগ করবেন—প্রতি মাসে ২৫০০ মিশরীয় পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬,২০০ টাকা), সম্পূর্ণ টিউশন ফি, থাকা–খাওয়া, বিমান ভাড়া, মিশরের ঐতিহাসিক স্থানে শিক্ষা সফরসহ আরও নানান সুযোগ-সুবিধা।
২০২৪ সালের নভেম্বরে মিশর সফরে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ তৈয়্যবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। এর আগে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে রিটজ কার্লটন হোটেলে এক সাক্ষাৎকালে ড. আহমদ তৈয়্যব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তার ধারাবাহিকতায় এবছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে পূর্ণ বৃত্তি দেওয়া হলো।
মিশরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংগঠন ইত্তিহাদ এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আবছার উদ্দীন বৃত্তিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এবারও তাদের পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেছে। এই উজ্জ্বল সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে মোট ১১৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে পূর্ণ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এই ধারাবাহিক সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষায় বাংলাদেশকে গৌরবের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করবে, ইনশাআল্লাহ।”
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ ধরনের কূটনৈতিক কার্যক্রম ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলমান থাকলে মিশরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।”
৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে কোরআন ও ইসলামি আইন শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসের কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। আজ এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, কৃষি ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্যুলার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষক ১৫ হাজারেরও বেশি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখের বেশি, যার ২০% আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। প্রায় ১০০টি দেশের শিক্ষার্থী আল-আজহারে অধ্যয়ন করছেন। শিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার। এছাড়া আল-আজহারের অধীনে পরিচালিত মিশরের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

