সৌদি আরব বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যুগান্তকারী সংস্কার এনেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটি বাতিল করেছে বহুল সমালোচিত ৫০ বছরের পুরোনো ‘কাফালা’ বা পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবস্থা, যা এতদিন প্রবাসী কর্মীদের নিয়োগকর্তার ওপর নির্ভরশীল করে রেখেছিল।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন, যাদের বড় অংশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ—বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন থেকে এসেছেন।
নতুন ব্যবস্থায় প্রবাসী কর্মীরা আর আগের মতো নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি পরিবর্তন, এক্সিট ভিসা পাওয়া বা ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বেন না। এর বদলে সৌদি সরকার চালু করেছে চুক্তিভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান মডেল, যা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকতর স্বাধীনতা ও আইনি সুরক্ষা দেবে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানায়, নতুন কাঠামোর আওতায় অভিবাসী শ্রমিকরা এখন থেকে—নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন,এক্সিট ভিসা ছাড়াই দেশ ত্যাগ করতে পারবেন, এবং শ্রম আইনের অধীনে পূর্ণ আইনি সুরক্ষা পাবেন।
এই সংস্কার সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির অংশ, যার লক্ষ্য অর্থনৈতিক কাঠামোর আধুনিকীকরণ ও শ্রমবাজারে মানবিক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ একে দেশের শ্রম ইতিহাসে “ঐতিহাসিক মাইলফলক” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একে “নতুন যুগের সূচনা” বলে অভিহিত করেছে, যদিও তারা বাস্তবায়ন ও তদারকির ওপর জোর দিয়েছে যাতে এই সংস্কার কার্যকরভাবে শ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
উল্লেখ্য, ১৯৫০-এর দশকে উপসাগরীয় অঞ্চলে চালু হওয়া কাফালা পদ্ধতির অধীনে বিদেশি কর্মীদের আইনি মর্যাদা নির্ভর করত তাদের নিয়োগকর্তা বা ‘কাফিল’-এর ওপর। ফলে চাকরি পরিবর্তন, আইনি সহায়তা গ্রহণ বা দেশ ত্যাগের ক্ষেত্রে কর্মীরা ছিলেন সম্পূর্ণভাবে নিয়োগকর্তার নিয়ন্ত্রণে। এই কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক হয়ে ওঠে।
নতুন সংস্কারের মাধ্যমে সেই পুরোনো প্রথার অবসান ঘটিয়ে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি মানবিক ও ন্যায্য কর্মপরিবেশের সূচনা করেছে সৌদি আরব।
একুশে সংবাদ/এ.জে