রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনার মসজিদে (মসজিদে নববী) থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। হিজরতের পর তিনি যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন থেকেই এই মসজিদটি শুধু ইবাদতের স্থান নয়; বরং মুসলিম সমাজ ও ইসলামী রাষ্ট্রের একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মসজিদে নববী থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো—
• কেন্দ্রীয় কার্যালয়: নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে মসজিদে নববী কাজ করত। গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত এখান থেকেই নেওয়া হতো।
• বিচার ও সালিশ: সামাজিক বিবাদ ও বিচারিক সমস্যার নিষ্পত্তি মসজিদে হতো। রাসুল (সাঃ) নিজেই বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।
• পরামর্শ সভা (শুরা): রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহাবিদের সঙ্গে শুরা বা পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হতো।
• শিক্ষাকেন্দ্র: এটি ইসলামী শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র ছিল। কুরআন, হাদিস ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা এখানে নিয়মিতভাবে চলত।
• সামরিক কেন্দ্র: যুদ্ধ পরিকল্পনা, সৈন্য প্রস্তুতি ও যুদ্ধ সংক্রান্ত নির্দেশনাও মসজিদ থেকেই দেওয়া হতো।
• ঐক্যের প্রতীক: মসজিদে নববী মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংহতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
ইসলামী সমাজে মসজিদের ভূমিকা
- পাঠদান: মসজিদ মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম স্থান। ইমামদের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত।
- বিচার-ফয়সালা ও মীমাংসা: কোনো বিষয় মীমাংসার প্রয়োজন হলে মসজিদে বসেই তা নিষ্পত্তি করা হতো। (বুখারি, হাদিস : ৬৩)
- বৈধ কথাবার্তা: রাসুল (সাঃ) ফজরের নামাজ শেষে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতেন এবং সাহাবিদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৪)
রাসুল (সাঃ) ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সব বিভাগ—প্রশাসন, বিচার, শিক্ষা ও সামরিক কার্যক্রম—সবই মসজিদ থেকেই পরিচালনা করতেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগেও মসজিদে নববীই ইসলামী খিলাফতের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.) ও আলী (রা.)—সকলেই এখান থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।
একুশে সংবাদ/এ.জে