প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বাস করেন দেশ পুনর্গঠনে সেনাবাহিনীর চলমান ভূমিকা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস–২০২৫ উপলক্ষে ঢাকার সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দানকালে এ আস্থার কথা জানান। সশস্ত্র বাহিনী দিবস–২০২৫ উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকার সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তাদের পেশাগত দক্ষতা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের সমন্বয়ে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখার ধারাবাহিকতা অটুট রাখবে।”
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূস মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তরণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনায় তিন বাহিনীর প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, শান্তিরক্ষী সদস্যদের পরিবার এবং দেশি–বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভাষণের শুরুতে তিনি ১৯৭১ সালের শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সকল বীর সন্তানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার গণআন্দোলনে নিহত, আহত ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, “তাদের সাহসিক আত্মত্যাগ আমাদের সামনে দেশ পুনর্গঠনের নতুন পথ খুলে দিয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের পরই মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের প্রতিরোধ শুরু হয় এবং ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নতুন গতি পায়। তিনি বলেন, “১৯৭১-এর যৌথ অভিযানই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় নিশ্চিত করে—যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
২০২৪–পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতার কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, জনগণের আস্থা রক্ষায় সেনাবাহিনী সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ হলেও নিরাপত্তা প্রস্তুতি জরুরি বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গত ৩৭ বছরে ৪৩টি দেশে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
বক্তৃতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সুখ–সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি বলেন, “উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবো।”
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

