ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নতুন করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কমপক্ষে ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
রোববার (২৭ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ৪২ জনই ছিলেন খাদ্য সহায়তার আশায় অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ। একই দিনে অনাহারে মারা গেছেন আরও অন্তত পাঁচজন। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যাদের অধিকাংশই শিশু।
এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, রোববার থেকে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সাময়িক সময়ের জন্য হামলা বন্ধ রাখা হবে—যা ‘ত্রাণ করিডোর’ নিরাপদ রাখতে সহায়ক হবে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বা নির্দিষ্ট এলাকার নাম প্রকাশ করেনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে জাতিসংঘকে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছে ইসরায়েল। তবে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ ইসরায়েলি পক্ষের অনুমতির অভাব ও নিরাপত্তাহীনতা।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা আকাশপথে ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশটির মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতও একই ঘোষণা দিয়েছে। তবে মানবিক সহায়তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ কার্যকর নয় এবং এটি সড়কপথের বিকল্প হতে পারে না।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বিষয়টি নিয়ে বলেন, “আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ হলো ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং প্রকৃত সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার কৌশল মাত্র। রাস্তাগুলো খুলে দিতে হবে, অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং মানুষকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।”
গাজা থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ঘোষিত ‘মানবিক বিরতি’ প্রকৃতপক্ষে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার ভাষ্য, “এ পর্যন্ত যেটুকু ত্রাণ ফেলা হয়েছে, তা মাত্র একটি ট্রাকের সমান—বাস্তবে যা কিছুই না। তাও পড়েছে এমন এলাকায়, যেগুলো রাতের বেলায় বিপজ্জনক। সেখানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।”
এ অবস্থায় ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে খাদ্য সংকট। গাজার স্বাস্থ্য সূত্রের বরাতে তিনি বলেন, “আমরা এখন গণহারে ক্ষুধাজনিত মৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি।”
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি অঞ্চলে। শনিবার সেখানে এক ত্রাণ শিবিরে চালানো ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন ছয়জন। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল নিজেই।
গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের অভাবে তাদের জরুরি উদ্ধারযানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। তারা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে মানবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারে।”
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

