দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে শান্তির ডাক দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ দুটির নেতাদের সঙ্গে কথোপকথনের পর উভয় পক্ষকেই শান্তি আলোচনায় রাজি করিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
রোববার (২৭ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, দুই দেশের নেতার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে এবং উভয়েই শিগগির আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।
শনিবার স্কটল্যান্ডে অবস্থিত নিজের গলফ রিসোর্ট ‘টার্নবেরি’ সফরের সময় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “দুই পক্ষই সংঘর্ষ বন্ধ করে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা শুরির বিষয়ে একমত হয়েছে।”
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইও ট্রাম্পের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয়েছি, তবে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিকতার প্রমাণ প্রত্যাশা করছি।”
গত ২৪ জুলাই সীমান্তে সংঘর্ষ শুরুর পর এ পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। সংঘর্ষ থামানো না গেলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত থাকবে বলেও সতর্ক করেন ট্রাম্প। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর আলোচনা আবার শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থাই ও কাম্বোডিয়ান পণ্যে ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা রয়েছে। এই ঘোষণার আগেই ট্রাম্পের এমন হস্তক্ষেপ অনেকের নজর কেড়েছে।
তবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়ামপংসা কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।”
এদিকে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। শনিবার কাম্বোডিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান নেয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ফুমথামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এরপর নিজের গলফ রিসোর্টে খেলা শুরু করার আগেই তিনি আশা প্রকাশ করেন, “যুদ্ধ থামলে আমি দুই দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক চুক্তি করতে প্রস্তুত থাকব।”
এদিকে, সীমান্ত সংঘাত নিয়ে দুই দেশ পরস্পরকে দায়ী করছে। থাই কর্তৃপক্ষের দাবি, কম্বোডিয়া প্রথমে ড্রোন পাঠিয়ে থাই সেনাবাহিনীর ওপর নজরদারি শুরু করে। বিপরীতে কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সেনারা পূর্বের সমঝোতা ভেঙে একটি খেমার হিন্দু মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার এই সীমান্ত বিরোধ শত বছরের পুরোনো, যার শিকড় উপনিবেশিক আমলে ফরাসিদের দ্বারা নির্ধারিত সীমানায়। বিভিন্ন সময় এই ইস্যুতে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও, সাম্প্রতিক এই সংঘাত তুলনামূলকভাবে বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
একুশে সংবাদ/স.ট/এ.জে