আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, ভারত সরকার সাম্প্রতিক সময়ে শত শত বাঙালি মুসলিমকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই সীমান্ত পার করে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাদের দেশছাড়া করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ জানায়, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া আরও তীব্র করে। সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ কোনো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড পূরণ করে না। যারা প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক, তারাও নিরাপদ নন।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত জুনে সংগঠনটি নয়টি ঘটনার অনুসন্ধান করে এবং এ বিষয়ে ১৮ জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেয়। এসব ঘটনার মধ্যে কিছু মানুষ আবার ভারতেও ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এই ইস্যুতে গত ৮ জুলাই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি।
ভারতের পক্ষ থেকে সরকারি কোনো তথ্য না থাকলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ১,৫০০ জনেরও বেশি মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ’র তথ্য অনুযায়ী, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা ও রাজস্থানের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো থেকে দরিদ্র মুসলিম শ্রমিকদের আটক করে সীমান্তে পাঠানো হয়। অনেককে বিএসএফ সদস্যরা ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া জম্মু ও কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান জোরদার হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এপ্রিলে ৪০ রোহিঙ্গাকে সাগরে নামিয়ে দিয়ে মিয়ানমার উপকূলে সাঁতার কেটে যেতে বলার অভিযোগ উঠেছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক দূত টম অ্যান্ড্রুজ একে “গভীর মানবাধিকার লঙ্ঘন” আখ্যা দেন এবং এটি আন্তর্জাতিক নন-রিফাউলমেন্ট নীতির সরাসরি লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৮ মে ভারতকে জানিয়ে দেয়, এভাবে ‘পুশ-ইন’ গ্রহণযোগ্য নয়। কেবলমাত্র নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদেরই আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত নেওয়া হবে।
এদিকে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে কোনো নির্দেশনা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ১৬ মে আদালত তাদের সাগরে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিকে “গল্পগাথা” বলে উল্লেখ করে, যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি অস্বীকার করেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, কাউকে দেশছাড়া করার আগে তাকে অভিযোগ জানানো, আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ এবং আপিল করার অধিকার থাকা উচিত। পাশাপাশি আটক ব্যক্তিদের যথাযথ খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয় এবং বিশেষত নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে