ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান আগ্রাসনে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৮ জন মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে হামলার শিকার হন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলা চলছে, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এগিয়ে নিচ্ছে হামাস।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে তারা ১০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। তবে সংগঠনটি বলেছে, আলোচনার অগ্রগতি এখনো কঠিন ধাপে রয়েছে, কারণ ইসরায়েল এখনও ‘অনমনীয়’ অবস্থান বজায় রেখেছে। মধ্যস্থতা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
হামাস নেতা তাহের আল-নুনু বলেন, “আমরা সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো নাগরিকদের জীবন রক্ষা, গণহত্যা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী কোন এলাকায় অবস্থান করবে তা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত না হয় এবং পরবর্তী আলোচনা সহজ হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, “যুদ্ধবিরতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে তা এই সপ্তাহে নাকি পরের সপ্তাহে হবে, তা এখনই বলা কঠিন। যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।”
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির জানিয়েছেন, চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে ১০ জন জীবিত বন্দি এবং ৯ জনের মরদেহ হস্তান্তরের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে গাজায় হামলা থামেনি। বুধবার দিনভর ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ৭৪ জনের মধ্যে ৮ জন ছিলেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের একটি খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে সহায়তা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭৭০ জন ছাড়িয়ে গেছে। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৭ হাজার ৬০০ জন ফিলিস্তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মানুষ এখন খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেও গুলিতে নিহত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে। এই ভয়াবহ বাস্তবতা প্রতিদিনের জীবনে পরিণত হয়েছে।”
এছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা চরম জ্বালানি সংকটে ভুগছে। হাসপাতালের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “জ্বালানি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সময়ের সঙ্গে লড়াই করছেন।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৬০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আক্রমণ চালানো হয়েছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৮টি আংশিকভাবে চালু রয়েছে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে