গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় স্বামীর পরামর্শে ফর্সা হওয়ার জন্য নুপুর (২০) নামের এক নববধূকে ইঁদুর মারার ট্যাবলেট খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার নলডাঙ্গা পূর্ব খামার দশলিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
মৃত নুপুর ওই গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে। ঘটনার খবর পেয়ে ওই রাতেই সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নুপুরের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে এসআই মমিনুল হক প্রধান লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য তা ওই রাতেই থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য নুপুরের মরদেহ গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত সাড়ে তিন মাস আগে নুপুরের সাথে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে রুবেলের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
মৃত নুপুরের পরিবারের দাবি, বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছিল। এরই মধ্যে ঘটনার দিন শুক্রবার সকাল ১১টায় স্বামী রুবেল ফর্সা হওয়ার জন্য স্ত্রী নুপুরকে ৪টি ট্যাবলেটসহ তার বাবার সাথে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাবার বাড়িতে আসার আগে স্বামী রুবেল স্ত্রী নুপুরকে বলেন, এই ট্যাবলেটগুলো খেলে তুমি খুব দ্রুত ফর্সা ও সুন্দর হবে। স্বামীর কথামতো নুপুর রাতে খাওয়ার আগে একটি ট্যাবলেট খায়। এরপর সে অসুস্থবোধ করতে থাকে। এমতাবস্থায় নুপুর স্বামী রুবেলকে ফোনে অসুস্থতার কথা জানায়। একথা জানার পর রুবেল আরেকটি ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আরেকটি ট্যাবলেট খেলেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। তার কথামতো নুপুর আবারও খাওয়ার পর আরেকটি ট্যাবলেট খেয়ে নেন।
তারপরেই নুপুর বমি করতে থাকেন। একপর্যায়ে নুপুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই রাতেই মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। তিনি নুপুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক ভেবে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এর আগেই নুপুর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মৃত নুপুরের চাচি ও দাদি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নুপুরকে তার স্বামী পরিকল্পিতভাবে বিষাক্ত ইঁদুর মারা ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
এসআই মমিনুল হক প্রধান ঘটনার বিষয়ে বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় অসহনীয় দুর্গন্ধযুক্ত দুটি ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। এই মুহূর্তে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে হয়তো নুপুরের মৃত্যু হতে পারে।
সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে