চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলাররা নির্ধারিত ইউনিয়নে বিক্রয় কেন্দ্র ও গুদাম থাকলেও কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পৌর এলাকায়। ফলে ইউনিয়নের কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন সহজলভ্য সেবা থেকে। অতিরিক্ত সময়, অর্থ ও কষ্ট করে পৌর এলাকায় গিয়ে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। অনেক সময় তারা নির্ধারিত দামে সার না পেয়ে খালি হাতেই ফিরছেন।
উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিএডিসি এবং বিসিআইসির মোট ৪৮ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ জন ডিলার বছরের পর বছর ধরে নিয়ম না মেনে পৌর এলাকায় সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডিলার ডিও উত্তোলন না করেই সরাসরি ডিপো থেকে বিক্রি করে দেন অথবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করেন।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ১০১৫ টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা এবং এমওপি ১০০০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও অনেক সময় তারচেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্রি না হওয়ায় কৃষকদের বাড়তি পরিবহন খরচও গুনতে হয়। হারদি ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায় গিয়ে প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে পরিবহন ভাড়া দিতে হয়, যা ১০ বস্তায় গিয়ে দাঁড়ায় ৫০০ টাকা।
উপজেলায় প্রায় ৯৬ হাজার ১২৭ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। ৪৬টি ব্লকের আওতায় ২৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট, ভুট্টা, তামাক, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও সঠিক সময়ে সার না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইউনিয়নের ১৫ জন বিসিআইসি ডিলারের মধ্যে ৯ জন এবং ৩০ জন বিএডিসি ডিলারের মধ্যে ২০ জন পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। চলতি জুন মাসে উপজেলার ডিলারদের মধ্যে চার ধরনের সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন।
এই অনিয়মের বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, “ডিলারদের সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যদি নির্ধারিত ইউনিয়নে ফিরে না যান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, “কৃষকদের যাতে সহজে সার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কেউ যদি নির্ধারিত দামের বেশি দামে সার বিক্রি করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সার ডিলারদের একজন বলেন, “আমরা ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গোডাউনের ব্যবস্থা পেলেই সেটি সম্ভব হবে। আমরা সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি, কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।”
এ বিষয়ে কৃষকদের দাবি, ডিলারদের তাদের নির্ধারিত ইউনিয়নে সার বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কৃষি খাত দুর্বল হবে না, বরং উৎপাদন বাড়বে ও কৃষকেরা স্বস্তিতে চাষাবাদ করতে পারবেন।
একুশে সংবাদ/চু.প্র/এ.জে