অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে সংস্কার বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের সম্ভাব্য ধানের শীষ প্রার্থী শেখ রবিউল আলম। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা উপেক্ষা করে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা আন্তর্জাতিক স্বার্থকে দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে বিএনপি ও সাধারণ মানুষ তা মেনে নেবে না।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সাইন্সল্যাব সিটি কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণসংযোগ কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। কর্মসূচিতে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রবিউল আলম বলেন, “দেশ এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে। রাজপথের সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছিলাম। এই সরকার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি কাজের দায়িত্ব নিয়েছে—সংস্কার, বিচার এবং একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং বিভাজনমূলক। এটি গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পরিবর্তে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক দল যে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছিল, সেই চুক্তির চেতনা এখন উপেক্ষিত। কমিশন কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পথকে সংকুচিত করার প্রচেষ্টা চলছে। এর ফলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে, এমনকি রাষ্ট্রও অস্তিত্ব সংকটে।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাবনার দায় নেবে না। জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণই। সংস্কার করবে নির্বাচিত প্রতিনিধি, কমিশন নয়। যারা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের পরিণতি শুভ হবে না।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে এখনো সময় আছে সাংবিধানিক সংস্কারের বৈধ পথ বিবেচনায় নেওয়ার। না হলে তার ফল হবে ভয়াবহ। বিএনপি গত ১৭ বছর রাজপথেই লড়াই করেছে। এই দলই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, অবৈধ ও ওয়ান-ইলেভেন সরকারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল। তাই যেখানে গণতন্ত্র হুমকির মুখে, সেখানেই বিএনপি থাকবে অগ্রভাগে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা আন্তর্জাতিক শক্তির স্বার্থ জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, বিএনপি তা প্রতিরোধ করবে। জনগণও তা মেনে নেবে না। আমরা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জনগণের রায়ের ভিত্তিতেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন এখন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেউ যদি এই প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে চায়, রাজপথে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।”
শেখ রবিউল আলম জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রস্তাব দ্রুত পর্যালোচনা করে চলতি মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিন। অযথা কালক্ষেপণ করা হলে প্রতিবাদ ও গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে আমরা বাধ্য হবো।”
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংস্কারের প্রস্তাব আমাদেরই ছিল। যা নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশে করা সম্ভব, তা দ্রুত করুন। তবে সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে নির্বাচিত সংসদ ও গণভোটের পথেই যেতে হবে। তার বাইরে কোনো পথ গ্রহণযোগ্য নয়।”
শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে কোনো গোষ্ঠীর চিন্তাধারা জাতির ওপর চাপিয়ে দিলে, দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ও বিএনপি তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
এই কর্মসূচিতে প্রায় হাজার কর্মী নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন নিউমার্কেট থানা যুবদলের সদস্য সচিব কে এম চঞ্চল বলেন, দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে ভোটারের ঢল নামবে। নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
একুশে সংবাদ/রাফি/বাবু/ এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

