AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কবি নজরুল কলেজে নলকূপ স্থাপনে গাফিলতি, অভিযোগকারীদের অধ্যক্ষের হুমকি


Ekushey Sangbad
কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
০৩:০৯ পিএম, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

কবি নজরুল কলেজে নলকূপ স্থাপনে গাফিলতি, অভিযোগকারীদের  অধ্যক্ষের হুমকি

দীর্ঘদিন ধরে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছিল রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজ । এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ প্রশাসন সম্প্রতি কলেজে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। কিন্তু তাতেও বিশুদ্ধ পানি সংকটের পূর্ণ সমাধান মেলেনি। নতুন স্থাপিত গভীর নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক এবং যেটির পানি একেবারেই পানযোগ্য নয়। নলকূপ স্থাপনে প্রশাসনের অবহেলা ও গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 

প্রতিদিন উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের হাজারো শিক্ষার্থী ক্লাসের উদ্দেশ্যে কলেজে আসে। তাদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতেই কলেজ প্রশাসন সম্প্রতি স্থাপন করে গভীর নলকূপটি। শুরুতে কিছুদিন বিশুদ্ধ পানি পাওয়া গেলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কলেজের অন্যান্য বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার নষ্ট থাকায় শিক্ষার্থীরা এখন মারাত্মক ভোগান্তির মুখে পড়েছে।

চলতি বছর স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে বর্তমানে উঠছে ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি, যা একেবারেই পানযোগ্য নয়। ক্লাস, খেলাধুলা কিংবা সন্ধ্যায় রিডিং রুমে পড়া শেষে তীব্র গরমে ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীরা পানি পান করতে নলকূপের কাছে ছুটে যায়, কিন্তু তখন ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি দেখে তাদের হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাইরে দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের অর্থায়নে স্থাপিত গভীর নলকূপটি এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। কিন্তু নলকূপটির স্থাপনে ঠিকাদারি দায়িত্বে কারা ছিলেন এবং প্রকল্পের বাজেট কত ছিল সবকিছুই এখনো ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে। তবে ১৪ লক্ষ টাকা বাজেটের কথা জানা গেলেও, কলেজ প্রশাসনের দাবি, এর অর্ধেক বাজেটেই নলকূপ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে নলকূপ স্থাপনের টেন্ডার এবং ঠিকাদারি দায়িত্বে কারা ছিলেন সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি কলেজ প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে শোনা যাচ্ছে, টেন্ডারটি পেয়েছিলেন কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউছুফ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ তা অস্বীকার করেন। তাহলে নলকূপ স্থাপনের টেন্ডার এবং ঠিকাদারি দায়িত্বে ছিলেন কারা জানতে চায় অনেকেই।

নলকূপ স্থাপনের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একবারও পরিষ্কার করা হয়নি পানির ট্যাংকিগুলো। দুটি ট্যাংকির ভেতরেই ময়লা পানি জমে শেওলা জন্মেছে, ফলে পানি আরও বেশি রঙিন ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা একাধিকবার কলেজ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বরং প্রতিবারই প্রশাসনের পক্ষ থেকে, পানিতে কোনো সমস্যা নেই শুনেই আসতে হয়েছে।

কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, কলেজের বিভাগগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বাধ্য হয়েই আমাদের এ পানি খেতে হয়। এই পানি পান করে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়েছে। মূল সমস্যা হলো এ পানি প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত এবং এতে প্রচুর আয়রন রয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি কোন স্তরের বা কোন লেয়ারের পানি কেমন তা আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এখানে আদৌ এমন কোনো পরীক্ষা হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। যদি পরীক্ষা হয়ে থাকত, তবে দুর্গন্ধযুক্ত ও আর্সেনিকমুক্ত পানি ওঠার কথা নয়। আমি মনে করি, এখানে যারা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের গাফিলতি রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনেকের কাছেই শুনেছি, ইউসুফ স্যার এ কাজ করেছেন যাহা ঘটে, তাহাই রটে। নতুন স্থাপিত নলকূপের পানির অবস্থা ভয়াবহ। পানি এতটাই ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত যে মুখের কাছে নেওয়াই যায় না। বোতলে ভরে কিছুক্ষণ রাখলে নিচে ময়লার স্তর জমে যায়। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে স্যারদের বক্তব্যে আমরা অবাক হয়েছি। স্যারেরা বলেছেন, সব ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাক, তখন সবাই এ নলকূপের পানি খাবে।

কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অভ্র রহমান বলেন, আমি যেহেতু নিয়মিত লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করি, তাই প্রায়ই এখানকার পানি পান করতে হয়। কিন্তু পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ ও আয়রন থাকার কারণে এটি আসলে খাওয়ার অনুপযোগী। তাছাড়া এটি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণও করা হয় না, নিচে প্রায়ই পানি জমে থাকে। এ পানিতে না বিশুদ্ধতা আছে, না স্বাভাবিক স্বাদ। তাই কলেজ প্রশাসনের উচিত দ্রুত পানি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, নলকূপ স্থাপনের পর সপ্তাহখানেক পানি ভালো ছিল, কিন্তু এরপর থেকেই পানি লালচে রঙের ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। এ সমস্যার সমাধান চেয়ে বহুবার কলেজ প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। আমরা বলেছিলাম বাইরে থেকে পানি খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই লাইব্রেরি রুমের সামনে একটি ওয়াটার পিউরিফায়ারের ব্যবস্থা করে দিতে, যেহেতু এখানে আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত পড়াশোনা করি। তখন স্যার বলেন, তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আমরা কেন ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করলাম?

মাসুদ রানা আরও বলেন, নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের শতভাগ গাফিলতি রয়েছে। কাজের সময় গাফিলতি থাকলেও পরবর্তীতে তদারকি করে সমস্যার সমাধান করা যেতো, কিন্তু সেটিও করা হয়নি।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সমস্যা ধীরে ধীরে হয়তো কেটে যাবে। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেই এটি স্থাপন করা হয়েছে। বাজেটের কথা জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ পাল্টা প্রশ্ন করেন, তা দিয়ে তোমার কাজ কি! 

নলকূপ স্থাপনের ঠিকাদারি দায়িত্বে কারা ছিলেন, ইউসুফ স্যার ছিলেন কি না, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না তিনি ছিলেন না। তোমরা কলেজে ভালো কিছু করো না। আছো শুধু কলেজে এটা কেন হয়েছে, ওটা কেন হয়েছে, এ ছোটখাটো জিনিসের জন্য তোমাদের আমি এখানে বসিয়েছি! 


একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - রাজধানী

Link copied!