দালাল চক্রের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে আফ্রিকার পাহাড়-জঙ্গলে প্রাণ হারাচ্ছেন একের পর এক বাংলাদেশি যুবক। নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে এবার প্রাণ গেল তিন বাংলাদেশির— নাজমুল শিপু (২৫), আবেদ মিয়া (২০) এবং সাইফ উদ্দিন মো. রায়হান (২১)। তারা জাম্বিয়ায় মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বজনরা।
নিহত শিপু চাঁদপুর জেলার মতলব থানার বোয়ালিয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং আবেদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তালশাহার এলাকার বাসিন্দা। সোমবার (২১ অক্টোবর) নবীনগরের দালালরা নিহতদের পরিবারকে মৃত্যুর খবর জানায়।
পরিবারের বরাতে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বাবু ও কামরুজ্জামান দিপু নামের দুই দালাল সরাসরি ফ্লাইটে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানোর আশ্বাস দেন। তারা ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ইথিওপিয়া পর্যন্ত বিমানের টিকিট কেটে দেন। পরে দালালরা পরিকল্পনা বদলে ইথিওপিয়া থেকে সড়কপথে মালাউই হয়ে জাম্বিয়ায় নিয়ে যায় এবং সেখানে স্থানীয় একটি চক্র তাদের অনাহারে রেখে নির্যাতন চালায়।
নিহতদের এক সফরসঙ্গী জানান, জাম্বিয়ার দালাল চক্র পাঁচজনের রুমে ১৫–২০ জনকে গাদাগাদি করে রাখত। খাবার দিত না, সামান্য প্রতিবাদ করলেই মারধর করত। কোনোমতে প্রাণে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছাতে সক্ষম হন তিনি।
নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, দালালরা এখন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পরিবারগুলো সন্তানদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের সাইফ উদ্দিন মো. রায়হানের মৃত্যুর খবর তার পরিবারের কাছে পৌঁছায় মৃত্যুর সাত দিন পর— সোমবার রাত ১টার দিকে। রায়হান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জের পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি এসএসসি ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
রায়হানের পিতা সালাউদ্দিন বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের থেম্বিসায় থাকেন। তিনি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী দালাল জয়নাল আবেদীন ফারুকের সঙ্গে ৯ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল। পরিবার আগাম ৫ লাখ টাকা প্রদান করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রায়হানসহ ছয়জন যুবক পাসপোর্ট ও টিকিট সংগ্রহ করে।
প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে দালাল চক্র তাদের ইথিওপিয়া হয়ে সড়কপথে মালাউই, জাম্বিয়া ও মোজাম্বিক পেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। জাম্বিয়ার পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে রায়হান পড়ে গিয়ে মারা যান। সফরসঙ্গীদের দাবি, স্থানীয় দালালরা তাকে মৃত অবস্থায় পাহাড়েই পুঁতে রাখে।
রায়হানের পিতা শোকে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, “দালালের কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু কোনো পিতা মেনে নিতে পারে না। সরকার যেন এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।”
এছাড়া কুমিল্লার চান্দিনার আরিফ হোসেন নামের আরও একজন বাংলাদেশি বর্তমানে জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় প্রবাসীরা জানান, বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও এক শ্রেণির দালালচক্র প্রতারণা করে তরুণদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে, যা রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
একুশে সংবাদ/এ.জে