জাপানে কর্মসংকট মোকাবেলায় আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক লাখ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার টোকিওর তোশি কাইকান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস” শীর্ষক এক সেমিনারে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “এই দিনটি আমার জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক ও অনুপ্রেরণাদায়ী দিন। জাপানে কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশিরা কেবল কর্মসংস্থানই নয়, বরং জাপানকেও জানার সুযোগ পাবে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের দায়িত্ব হলো দেশের তরুণদের জন্য দিগন্ত উন্মোচন করা।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) এর সঙ্গে জাপানের কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস) এবং ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কো-অপারেটিভস (NBCC) ও জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি (JBBRA)-র মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।
জাপানের শিজুওকা ওয়ার্কপ্লেস এনভায়রনমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট কো-অপারেটিভ-এর প্রতিনিধি মিতসুরু মাতসুশিতা জানান, অনেক জাপানি কোম্পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং এই ধারা আগামীতে আরও বাড়বে।
NBCC-এর চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ ও দক্ষ কর্মীদের মাঝে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জাপান ও বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।”
ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে জানান, তারা বাংলাদেশে একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে, যেখানে প্রতিবছর ১৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০০ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিলড ওয়ার্কার কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (JITCO) চেয়ারম্যান হিরোয়াকি ইয়াগি বলেন, “বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে কাজের সুযোগ রয়েছে, তবে ভাষা শেখানোর মতো প্রশিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে।”
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (MHLW) স্টেট মিনিস্টার নিকি হিরোবুমি বলেন, “জাপানে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশি কর্মীদের সহায়তা এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।”
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী জানান, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিকের ঘাটতি ১ কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুযোগ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কর্মসূচি শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগই নয়, বরং বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং উভয় দেশের অর্থনীতি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
একুশে সংবাদ /স.ট/এ.জে