বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আদানি গ্রুপ। তবে সেই সঙ্গে তারা দ্রুত বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও ডলার সংকটের কারণে তা পরিশোধ করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক।
আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ দিচ্ছে। গত বছরের মার্চ থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে। চুক্তির আওতায় এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী এখন প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সেজন্য প্রতি মাসে আদানির কাছ থেকে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পায় পিডিবি।
বিল পরিশোধের জন্য আদানি গ্রুপকে বাংলাদেশ থেকে ডলার পাঠানো হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়েই তা শোধ করে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে পুরো ডলার সোনালী ব্যাংক শোধ করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে আংশিক বিল পরিশোধে বাংলাদেশ থেকে গেছে ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংক পাঠিয়েছে।
মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বকেয়া পড়েছে ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে জুন ও জুলাইয়ের বকেয়া হিসাব করলে মোট অঙ্ক ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, হ্যাঁ, আমরা সব পেমেন্ট একবারে পরিশোধ করতে পারছি না। পার্শিয়াল পেমেন্ট করে যাচ্ছি।
সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার আয় হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও দরকার হলে আন্তঃব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে চাহিদা পূরণ করা হয়।
আদানি গ্রুপের বরাত দিয়ে ভারতের ইকোনমিক টাইমসও গত ২৩ অগাস্ট এক প্রতিবেদনে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকার কথা বলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আদানি পাওয়ারের না থাকলেও বকেয়া এভাবে বাড়তে থাকলে ঋণদাতা ও কয়লা সরবরাহকারীদের বিল শোধের চাপে পড়বে ভারতীয় এ কোম্পানি। সে কারণে তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরেই ডলার নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশ। কমতে কমতে রিজার্ভ ঠেকেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আইএমএফ এর কাছে আরো ৩ বিলিয়ন ডলার চাইতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আদানির বকেয়ার বিষয়ে বাংলাদশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংক ডলার সংকটে আছে। তাই আদানির বিদ্যুৎতের বিল বকেয়া পড়ছে। আমরা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলছি, যদি সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে অন্য কোনো ব্যাংককে এই চুক্তির আওয়তায় আনা যায়, যাদের ডলার সরবরাহ ভালো রয়েছে। আরও এক-দুটি ব্যাংককে এ চুক্তির আওয়তায় আনার জন্য কথা বলা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

