দীর্ঘ ১৬ বছর পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সবকিছু চূড়ান্ত হলে ২০০৮ সালের পর এটাই হবে ইইউ’র প্রথম বড় আকারের পর্যবেক্ষক দল।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
রাষ্ট্রদূত জানান, মিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫০ থেকে ২০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে কাজ করবে। তাদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যবেক্ষকরা ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এসে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করবেন, আর বাকিরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে যুক্ত হবেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর এবারই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি, দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও ইইউ সহায়তা প্রদান করবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও শাসন সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রমক্ষেত্রের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
মাইকেল মিলার জুলাই মাসে ঘোষিত জাতীয় সনদ (National Charter)–কে ‘দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকনির্দেশক একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সদ্য গৃহীত শ্রম আইন সংস্কার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলোকে প্রশংসা করে বলেন, “এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকে একটি টেকসই গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিচ্ছে।”
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। তাঁর ভাষায়, “আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের একটি বড় সুযোগ।”
এ সময় উভয় পক্ষ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ইইউ’র সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাণিজ্যিক আলোচনায় তারা একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (EPA) নিয়ে কথা বলেন, পাশাপাশি বিমান ও নৌপরিবহন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় খোঁজেন। মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হন উভয়পক্ষ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনায় বিশ্বখ্যাত শিপিং কোম্পানি এ.পি. মোলার–ম্যার্সক–এর সঙ্গে একটি বড় চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
এর জবাবে রাষ্ট্রদূত মিলার জানান, ড্যানিশ কোম্পানিটি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে, যাতে লালদিয়া টার্মিনালকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক বন্দর সুবিধায় পরিণত করা যায়।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই ও মানবাধিকার নিশ্চিতে কার্যকর কাঠামো তৈরির বিষয়েও আলোচনা হয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

