মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা জুলাই–আগস্ট হত্যাযজ্ঞ মামলায় আজ (সোমবার, ৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে শেষ সাক্ষীর জেরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন সাক্ষী মো. আলমগীরকে জেরা করবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই জেরা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। তিনি মামলার ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি জানান, গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালে ৪১ জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং অন্তত ৫০টিরও বেশি জেলায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সেদিন সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজকের দিনটি জেরার জন্য ধার্য করা হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ ও আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের সাক্ষ্য শুরু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়, যেখানে জুলাই–আগস্টে সংঘটিত সহিংসতার চিত্র ফুটে ওঠে। দ্বিতীয় দিনে (২৯ সেপ্টেম্বর) আরও কিছু প্রমাণ হাজির করা হয়, যার মধ্যে ছিল যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন এবং যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের অভিযানের ভিডিওচিত্র। তিনি জানান, জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়ে।
এ মামলায় মোট ২৫ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষে যুক্তিতর্ক ও রায় ঘোষণার দিকে অগ্রসর হবে ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন এবং পরে তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।
এ মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে দেশব্যাপী সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা উঠে এসেছে। শহীদ পরিবারগুলো দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগপত্রটি প্রায় আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে রয়েছে দালিলিক প্রমাণ, জব্দতালিকা, তথ্যসূত্র ও শহীদদের তালিকার বিবরণ। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দপ্তরে দাখিল করা হয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে