যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতায় যাওয়া। তার ভাষায়, “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর তারা (ইউক্রেন) তা নয়।”
আলাস্কায় এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা শেষে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়। তবে জেলেনস্কি শর্তটি প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের বেশিরভাগ এলাকা অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাম্প বলেন, কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তিই একমাত্র সমাধান। তিনি দাবি করেন, “সবাই স্বীকার করছে— যুদ্ধ থামানোর সেরা উপায় হচ্ছে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি, কারণ যুদ্ধবিরতি টেকে না।”
অন্যদিকে জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক হওয়ায় স্থায়ী শান্তির পথ রুদ্ধ হচ্ছে। তবুও তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানালেও তারা ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল জানিয়েছেন, ইউরোপের কয়েকজন নেতা সোমবারের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য রাশিয়ার সরকারি অবস্থানের সঙ্গে অনেকাংশে মিলছে। পুতিন আগেও বলেছিলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান ঠেকানো এবং নতুন ভূখণ্ড স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
এদিকে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও পুতিন মূলত একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, তবে এতে ইউক্রেনকে রাজি হতে হবে। প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কির উচিত সমঝোতায় যাওয়া। কারণ রাশিয়া একটি বড় শক্তি, আর তারা নয়।”
জেলেনস্কি অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তার মতে, দোনেৎস্কের কৌশলগত শহরগুলোই ইউক্রেনের নিরাপত্তার প্রধান রক্ষাকবচ।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুতিনও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলেছেন, তবে তিনি বিদেশি সেনা জড়িত থাকার বিরোধিতা করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর পুতিনের সঙ্গে বৈঠক ট্রাম্পের জন্য যেমন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, তেমনি পুতিনের জন্য কূটনৈতিক অর্জন। যদিও বৈঠকের আগেই ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে