কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপটে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবার পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এর ফলে উভয় দেশের বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৩০ এপ্রিল (বুধবার) রাতেই ‘নোটাম’ জারি করে জানায়, এখন থেকে পাকিস্তানে নিবন্ধিত বা পরিচালিত কোনো সামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না। এ নিষেধাজ্ঞা ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এর আগে, পাকিস্তান ২৯ এপ্রিল ভারতের উড়োজাহাজের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছিল। ফলে দুই দেশের বিমান সংস্থাগুলো বিকল্প দীর্ঘ রুটে যেতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে সময় ও খরচ বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সগুলোর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে পৌঁছাতে চীন বা শ্রীলঙ্কার আকাশসীমা ব্যবহার করতে হবে, যা রুট প্রায় দ্বিগুণ করে তুলছে। একইসঙ্গে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ভারতের বিমানগুলোরও পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপমুখী যাত্রায় অসুবিধা হচ্ছে।
উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কাশ্মীরের পহেলগামে সম্প্রতি বন্দুকধারীদের হামলা, যেখানে একাধিক নিরাপত্তাকর্মী হতাহত হন। ভারত এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী না করলেও পরপর কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেয়:
পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল
কূটনীতিক বহিষ্কার
সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত
পাকিস্তানও পাল্টা জবাবে ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশ ও স্থলসীমা বন্ধ করেছে এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান বিষয়ক অভিযানে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন বলে NDTV জানিয়েছে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী (PAF) দাবি করেছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) চারটি রাফায়েল জেট কাশ্মীর সীমান্তে টহল দিচ্ছিল, যাদের তারা সনাক্ত করে বাধা দেয়।
পিটিভি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী,
“পিএএফের হস্তক্ষেপে ভারতীয় রাফায়েল জেটগুলো পালাতে বাধ্য হয়।”
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন—“পাকিস্তান প্রথমে কোনো উসকানি দেবে না। কিন্তু যদি কোনো উসকানি আসে, তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”
আকাশসীমা বন্ধ, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং সীমান্তে যুদ্ধবিমান মোতায়েন—সব মিলিয়ে উপমহাদেশে ফের এক যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে।
একুশে সংবাদ// স.ট//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :