AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তানোরে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আলু রোপনে ব্যস্ত কৃষক


Ekushey Sangbad
সারোয়ার হোসেন, তানোর, রাজশাহী
০৭:২১ পিএম, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

তানোরে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আলু রোপনে ব্যস্ত কৃষক

লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে রাজশাহীর তানোরে আলু রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণীরা। গত মৌসুমে আলুতে ব্যাপকহারে লোকসান গুনতে হয়েছে চাষীদের। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে পুনরায় রোপনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষী ও শ্রমিকরা। যেন খাওয়া দাওয়ার কোন সময় নেই। খাওয়া দাওয়া জমিতেই চলছে। কারন কে কার আগে জমি রোপন করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে চাষী থেকে শুরু করে শ্রমিকদের মাঝে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে আলু রোপন ও  জমি তৈরির কাজ। এছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় বীজ আলু কাটতে কৃষাণীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে করে কৃষাণীরা আলুর বীজ কেটে বাড়তি আয় করছেন। ফলে উপজেলার প্রতিটি মাঠে আলু রোপনের ধুম পড়েছে।


তানোর পৌর সদরের আলু চাষী মনির জানান, গত মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রচুর পরিমানে লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু চাষাবাদ ছাড়া উপায় না। বিঘায় ১০/১২ হাজার টাকা করে পেয়েছি। বাকিটা লোকসান। এবারে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু রোপন করব। মঙ্গলবার থেকে রোপন শুরু হবে।


বাক্কার নামের আরেক চাষী জানান, গত মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। জমি থেকে আলু বিক্রি করার কারনে কিছুটা লোকসান কম হয়েছে। যারা লাভের আসায় হিমাগারে রেখেছিল তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যাপকহারে। কারন হিমাগারে ৬ টাকা কেজি ভাড়া, শ্রমিক ও বহন খরচ দিতে হয়েছে। কিন্তু একশো বস্তায় আলু মেলেছে ৬০/৭০ বস্তা। বাকিটা পঁচে নষ্ট হয়েছে। অথচ ভাড়া দিতে হয়েছে একশো বস্তার। তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে আলু রোপন করতে দু বস্তা পটাশ সার, এক বস্তা ডিএপি, এক বস্তা টিএসসি, বরুন এক কেজি, থিয়োভিট এক কেজি। বিঘায় রোপন করতে শ্রমিক খরচ ৪ হাজার টাকা, বিঘায়  ন্যাড়া কাটা ৫০০ টাকা, চাষ আড়াই হাজার টাকা, জমি লীজ ১৬/১৮ হাজার টাকা , বীজ ১৩ হাজার টাকা, আলুর বীজ কাটা ২৫০ টাকা, বীজ বহন ২৫০ টাকা, সব মিলে এক বিঘা রোপণ করতেই ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে । কিন্তু সারের দাম দিগুণ হওয়ার কারনে আরো ৫/৭ হাজার টাকা বাড়তি খরচ  গুনতে হবে চাষীদের।


মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চাষী মিজান জানান, গত মৌসুমে ২৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। একারনে কমিয়ে এবারে ১২ বিঘা জমিতে আলু রোপনের কাজ চলছে।


উপজেলার সিন্দুকাই,  গুবিরপাড়া, চাপড়া, কালনা, নারায়নপুর, ধানতৈড়,  আমশো, জিওল, চাদপুর, সিধাইড়, কালীগঞ্জ, রাতৈল, কাসারদিঘি, গোকুল, আড়াদিঘি, লালপুর, মোহর, কৃঞ্চপুর, পাঠাকাটা, চিমনা, দুবইল, সাহাপুর, কৈল, যোগিশো, কুযিশহর, আজিজপুর, তালন্দ, হাতিশাইল কামারগাঁ, সরনজাই, লবলবি, তাতিহাটি, শুকদেবপুর, দরগাডাঙ্গা, কলমা, চন্দনকোঠা, মাদারিপুর, জমশেদপুর পুর, ধানোরা, গাল্লা, বৈদ্যপুরসহ প্রায় মাঠে আলু রোপনের কাজ চলছে জরালো ভাবে। এছাড়াও প্রজেক্টে বা বাড়ির আঙ্গিনায় আলুর বীজ কেটে বাড়তি আয় করছেন কৃষাণীরা। ৫০/৬০ কেজির প্রতি বস্তা ৫০ টাকায় কেটে দিচ্ছেন। আবার যারা দু পাচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবেন তাদের আলুর বীজ বাড়ির গৃহিনীরা কেটে দিচ্ছে। যার কারনে কিচুটা কম হচ্ছে খরচ। তবে এর পরিমাণ অনেক কম।


চাষীরা জানায়, সব ধরনের সারের দাম আলু রোপনের সময় বাড়তি টাকা । প্রতি মৌসুমে সার নিয়ে বেপরোয়া সিন্ডিকেট চলে। সরকারি মূল্যে মিলেনা সার। আর সরকারি হিসেবে সার প্রয়োগ করলে আলুর ফলন পাওয়া যায়না। চারদিক দিয়ে ভোগান্তির শেষ থেকেনা। অথচ বিক্রির সময় ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায়। এবার লাভের আশায় আলু রোপন করা হচ্ছে। কিন্তু গত মৌসুমের মত লোকসান গুনতে হলে আগামীতে আলু চাষ কমে যাবে। আমরা এত আলু উৎপাদন করেছিলাম বলেও অল্প দামে আলু কিনে খেতে পেরেছে। বিগত তিন মৌসুমে আলুতে ব্যাপক লাভ পাওয়ার কারনে গত মৌসুমে ব্যাপক হারে আলু চাষ হয়েছিল। ঋণ মহাজন করে আলু চাষ করে ধরাশায়ী হয়ে অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে। তবে গত মৌসুমে লোকসান গুনা চাষীদের কে সরকারি ভাবে প্রণোদনা দেয়া উচিত ছিল।


শ্রমিক মোস্তফা, সাদিকুল শহিদুলসহ অনেকে জানান, ফজরের জানের পরেই জমি রোপন করতে যায়। মাগরিবের আজানের সময় কাজ শেষ হয়। ৪ হাজার টাকা বিঘা রোপণ করা হচ্ছে। এতে করে দিনে শ্রমিক প্রতি ১৩০০/১৫০০ টাকা থেকে ঊর্ধ্বে  ১৮০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। যার কারনে সংসারে সচ্ছলতা আসছে। বছরে আলুর কাজ করে শ্রমিকরা মোটা টাকা আয় করে থাকে।


উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, গত মৌসুমে এউপজেলায় আলু চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ১৯০ হেক্টর লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ১২০০ হেক্টর কম জমিতে আলু চাষ হবে। এপর্যন্ত ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে।  এছাড়াও পৌর এলাকার রহিমা ডাঙ্গায় আগাম আলু চাষ হয়েছে ৪৫ হেক্টর জমিতে। যা অল্প কিছু দিনের মধ্যে উত্তোলন হবে। তিনি আরো জানান, আলু রোপন শেষ হয়ে যেত। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে এক রাতের রেকর্ড পরিমান ভারি বৃষ্টির কারনে রোপা আমন ধান কাটতে দেরি হয়েছে। মুলত একারণেই আলু রোপনে সময় লাগছে। কারন মাটি ভিজে রসালো হয়ে আছে। তবে আশার কথা আবহাওয়া আলু রোপনের অনুকূলে থাকার কারনে কোমর বেধে রোপন করছেন চাষীরা।


একুশে সংবাদ/ সা এ

 

Link copied!