ঢাকার সাভারে জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ ছায়াদ মাহমুদ খানের মৃত্যুকে ঘিরে এক বছরের ব্যবধানে আদালতে দুটি ভিন্ন মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম মামলার বাদী নিহত শিশুটির বাবা, আরেকটি মামলায় বাদী হয়েছেন এক অচেনা ব্যক্তি, যিনি নিজেকে ‘সচেতন নাগরিক’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
ছায়াদ মাহমুদ খান (১২) মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ধল্লা এলাকার বাহাদুর খানের ছেলে। তিনি সাভারের জাবাল-ই-নুর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ছায়াদ সাভারের শাহীবাড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বের হন। কিছুক্ষণ পর সাভার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন নিউমার্কেটের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ওইদিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা বাহাদুর খান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ২০–৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
তবে এক বছর পর ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নতুন একটি মামলা করা হয়, যেখানে বাদী হিসেবে উঠে আসেন সাভারের শাহীবাগ এলাকার রফিকুল ইসলাম। তিনি নিজেকে ‘সচেতন নাগরিক’ দাবি করে মামলায় ২৫২ জনের নাম উল্লেখ করেন এবং আরও ২০০–৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করেন। মামলার তারিখ দেখানো হয় ১৯ জুলাই, স্থান আশুলিয়া থানার সামনে এবং সেখানে ছায়াদের বয়স লেখা হয় ২৬ বছর। যদিও বাবার নাম ও ঠিকানা মিলে যায়। আদালত মামলাটি আশুলিয়া থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই–আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সিংগাইর এলাকায় একমাত্র নিহত ছিলেন বাহাদুর খানের ছেলে ১২ বছর বয়সী ছায়াদ। তাকে সাভারে গুলি করা হয়েছিল এবং ধল্লা কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
বাহাদুর খান অভিযোগ করে বলেন, “আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাইতে আমি নিজেই মামলা করেছি। অচেনা কেউ কেন এক বছর পর মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার ছেলেকে ভিকটিম বানাবে? ওই মামলার তারিখ, সময় আর ঘটনাস্থল সবই ভুয়া। এটা ষড়যন্ত্র।”
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেকর্ডেও ছায়াদের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। হাসপাতালের ম্যানেজার ইউসুফ আলী জানান, “আমাদের রেকর্ডে ছায়াদ মাহমুদ খান সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর কেস নম্বর ১১৮৫৩। সরকারি গেজেটেও তাঁর নাম আছে।”
বাদী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, আদালতের নির্দেশে তারা বিষয়টি যাচাই করেছেন। তিনি জানান, “এই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় আগে কোনো মামলা হয়নি। তবে সাভার মডেল থানায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন, যা তদন্তাধীন রয়েছে। বিষয়টি আদালতে প্রতিবেদন আকারে জানানো হয়েছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে