গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নানা সংকটে ধুঁকছে। চিকিৎসক, কর্মচারী, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেশির ভাগ পদই শূন্য। অস্ত্রোপচার কক্ষ থাকলেও রোগীরা পাচ্ছেন না কোনো সেবা। জরুরি প্রয়োজনে বেশি খরচ করে জেলা বা বিভাগীয় শহরের বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে রোগীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৮ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। একজন চালক চালাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ি ও প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট অনুমোদিত পদ ৬১টি। এর মধ্যে শূন্য ৫১টি। শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪টি পদের মধ্যে শূন্য ১৬টি। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন কিংবা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। ফলে ওয়ার্ডবয় বা পিয়নরা মাঝে মাঝে ওষুধ বিতরণ করেন। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২২ জুলাই অ্যাম্বুলেন্স চালক বদলি হওয়ার পর থেকে আর নতুন চালক নিয়োগ হয়নি। ফলে রোগীরা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্বল্প খরচের সেবা পাচ্ছেন না। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সুন্দরগঞ্জ থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে খরচ হতো মাত্র ১ হাজার ২০ টাকা। এখন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হচ্ছে ২–৩ হাজার টাকা। গড়ে মাসে শতাধিক রোগী এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, “দুই বছর ধরে দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রায় অচল হয়ে পড়ে আছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীরা বেশি খরচে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই যদি হয় স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?”
চিকিৎসাধীন রোগী আনারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “এখানকার ল্যাট্রিন ব্যবহার অনুপযোগী, নলকূপ নষ্ট, খাবারের মান খারাপ। প্রায় সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। দুই দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ভাইকে রংপুরে পাঠাতে হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে, যেখানে খরচ পড়েছে দ্বিগুণ।”
ছাপড়হাটী ইউনিয়নের সুমন মিয়া জানান, “এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও কোনোদিন ডাক্তার আসেননি। মাঝে মাঝে ওয়ার্ডবয় বা পিয়ন ওষুধ বিতরণ করেন। স্থানীয়দের প্রশ্ন—বরাদ্দকৃত ওষুধ যায় কোথায়?”
কাপাসিয়ার চর কালাইসোতা গ্রামের আনছার আলী বলেন, “শুনেছি গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যসহকারী আছে, কিন্তু কোনোদিন দেখি নাই। কমিউনিটি ক্লিনিকে মাঝে মাঝে ওষুধ মেলে, আর নদীতে ভাসমান হাসপাতাল এলে কিছু সেবা পাই।”
স্বাস্থ্য পরিদর্শক আলমগীর সরকার জানান, “অনেক স্বাস্থ্যসহকারী অবসর নিয়েছেন, কিন্তু নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অসংখ্য পদ শূন্য রয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিষয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছু করার নেই।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, “অ্যাম্বুলেন্স চালক, মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে প্রয়োজনে আমার চালকই মাঝে মাঝে অ্যাম্বুলেন্স চালান।”
একুশে সংবাদ/গা.প্র/এ.জে