ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলির আদেশ পেয়েছেন ডা. কামাল আহমেদ। স্থানীয়ভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এ চিকিৎসককে দায়িত্বে আনার ঘটনায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন উপজেলাবাসী। বিষয়টি মঙ্গলবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তোলা হলে সেখানে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং বদলির আদেশ বাতিলের দাবি ওঠে।
সূত্র জানায়, নিজ উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হওয়ার সুযোগ না থাকলেও এবার সেটি মানা হয়নি।
পীরগঞ্জ পৌরসভার রঘুনাথপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ডা. কামাল আহমেদ ২০১৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকাকালে স্থানীয়ভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে ক্লিনিক পরিচালনা ও রোগী টানার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তৎকালীন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মজিদ প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে বিরোধেও জড়ান তিনি।
কামাল তখন ক্ষমতাসীন দলের চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পরে নানা অভিযোগে জেলার বাইরে বদলি করা হয় তাকে। তবে ওই সময়ও তিনি প্রায়ই পীরগঞ্জ ও আশপাশের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সময় দিতেন।
প্রায় তিন বছর আগে শহীদ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সড়কে নিজের বাসায় ‘কেয়ার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন তিনি। যদিও মালিকানা অন্যজনকে দেখানো হলেও প্রকৃত মালিকানা তারই বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হিমালয়, গ্লোবাল, পপুলার ও একতা ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার শেয়ার রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোকাদ্দেস হায়াত মিলন বলেন, “ডা. কামাল এর আগেও এখানে দায়িত্বে ছিলেন। সরকারি ডিউটি ফাঁকি দিয়ে সব সময় ক্লিনিক ব্যবসা করেছেন। তার কারণে মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।”
ওষুধ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, “উপজেলার প্রায় সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কামাল ডাক্তারের শেয়ার আছে। তিনি সেখানেই সময় দেন বেশি।”
পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য সম্পাদক লিমন সরকার বলেন, “তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিলে হাসপাতাল চিকিৎসা কেন্দ্র না হয়ে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হবে।”
একজন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ডা. কামালকে শেয়ার না দিলে তিনি সেখানে কাজ করেন না। বাধ্য হয়েই শেয়ার রাখতে হয়।”
ডা. কামাল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি এখন পীরগঞ্জবাসীকে সেবা দিতে চাই।”
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আনিসুর রহমান বলেন, “এটি বিভাগীয় বিষয়। আমার কিছু করার নেই।”
একুশে সংবাদ/ঠা.প্র/এ.জে