চট্টগ্রাম-৫ আসনের সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের সুযোগ্য কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা আজ হাটহাজারীসহ চট্টগ্রাম উত্তরাঞ্চলের তৃণমূলের কাছে জনতার নেত্রী হিসেবে পরিচিত।
১৯৭৬ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেওয়া শাকিলা ফারজানা চট্টগ্রামের সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। দুই বছর চট্টগ্রাম জজ কোর্টে আইনপেশায় যুক্ত থাকার পর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করে ২০০৪ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী ছিলেন শাকিলা ফারজানা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। কবিতা আবৃত্তি ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দক্ষ। ছাত্রজীবনে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অল্প সময়েই নেতাকর্মীদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। হাটহাজারীর অলিগলি থেকে প্রবীণদের আড্ডায়—সব জায়গায় উচ্চারিত হতে থাকে তার নাম।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের নেতাদের দমননীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে শাকিলা ফারজানা ছিলেন অন্যতম সাহসী কণ্ঠ। বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেন তিনি। এর ফলেই ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট তাকে দুই সহকারীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। বাঁশখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে তিনি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। আদালতে হাজির করার সময় তার চোখের অশ্রু দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হলেও মামলার জট থেকে আজও তিনি মুক্ত নন।
নারী রাজনীতিক হিসেবে রাজনৈতিক নির্যাতনের এমন নজির দেশে বিরল। অনেকের মতে, বিএনপির মধ্যে সাকা চৌধুরী, আসলাম চৌধুরীর পরই শাকিলা ফারজানা সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি; বরং আরও শক্তভাবে রাজনীতির মাঠে অবিচল থেকেছেন। হাটহাজারীর জনগণের কাছে তিনি এখন শুধু রাজনৈতিক নেত্রী নন, বরং সংগ্রাম ও সাহসের প্রতীক।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শাকিলা ফারজানা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অহিংস রাজনীতির পুরোধা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের পথ অনুসরণ করে হাটহাজারীকে গড়ে তুলতে চান। তার মতে, “গায়ের জোরের রাজনীতি আর টিকবে না। মানুষের মন জয় করে, তাদের কথা শুনে গণমানুষের রাজনীতি করতে হবে।”
তিনি শিক্ষার মানোন্নয়ন, চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করা, গ্রামীণ ও শহরের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি, কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে আধুনিক পদ্ধতি চালু, তরুণ সমাজকে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং নারীর ক্ষমতায়নকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছেন। শাকিলা ফারজানার বিশ্বাস, এসব বাস্তবায়ন হলে হাটহাজারী আবারও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে