গাজীপুরের কালীগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের লক্ষ্যে কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, প্রকল্পের অনিয়মে সরাসরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন।
প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১২টি কেঁচো সার উৎপাদন প্রকল্প রয়েছে—জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে ১১টি এবং মোক্তারপুর ইউনিয়নে ১টি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ব্যয় বিবরণী অনুযায়ী, প্রতিটি প্রকল্পে চারি ৪ হাজার টাকা, ভার্মিকম্পোস্ট হাউজ ১০ হাজার টাকা, আমদানীকৃত কেঁচো ১০ হাজার টাকা, টিন ১৫ হাজার টাকা, কাঠ, বাঁশ ও সিমেন্ট খুটি ও স্ক্রু বাবদ ১৫ হাজার টাকা, পলিব্যাগ ৫ হাজার টাকা, পলিব্যাগ সিলিং মেশিন দুটি ৬ হাজার টাকা, সাইনবোর্ড ১,৫০০ টাকা এবং আনুষাঙ্গিক ৩,৫০০ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ১২টি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
প্রতিটি প্রকল্পে ২৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের একটি টিনের শেড তৈরির জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার টাকা। ১২টি প্রকল্পের জন্য এটি করলে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হওয়া উচিত। তবে স্থানীয় কৃষকরা জানান, শেড নির্মাণের জন্য কোন বরাদ্দ তারা পাননি এবং কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাদের নিজ খরচে শেড তৈরি করতে বাধ্য করেছেন।
জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর ও দেওতলা এলাকার কৃষকরা জানান, “প্রকল্পে ধার্যকৃত কাঠ, বাঁশ, সিমেন্ট খুটি ও স্ক্রু বাবদ ১৫ হাজার টাকা কৃষি অফিস ব্যবহার করেনি। আমরা নিজ অর্থে ঘর বা শেড নির্মাণ করেছি। বাকি প্রকল্পেও একই অবস্থা দেখা গেছে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে।”
ঠিকাদার নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম ও ঘাপলা হয়েছে। স্থানীয় সার ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সোহেল এন্টারপ্রাইজের রমিজকে দরপত্র ছাড়াই কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “খরচের বিষয়ে ম্যাডাম (উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) আমাদের কিছু বলেন না। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখাশোনা ছাড়া আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। বরাদ্দ কত এবং কিভাবে খরচ হচ্ছে তা আমাদের অজানা।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম দীর্ঘদিন একই স্থানে দায়িত্বে থাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘রামরাজত্ব’ কায়েম করেছেন। তারা অবিলম্বে তার বদলীর দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম অভিযোগের বিষয়ে স্বীকার করেছেন যে, “কৃষকদের নিজ অর্থ দিয়ে ঘর বা শেড নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা কোথায় ব্যয় হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে পারছি না।”
সচেতন মহল বলেন, “কৃষি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে এ ধরনের দুর্নীতি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। দ্রুত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “অভিযোগ জানার পর সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। আর্থিক অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।”
ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেছেন, “দোষ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে