নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় তিন বছরের শিশু নুসরাত জাহান রোজা হত্যা মামলায় তার সৎ মা জোবাইদা বেগমকে (২০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত জোবাইদা বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত জোবাইদা বেগম লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের সজীব কাজীর স্ত্রী।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সজীব কাজীর প্রথম স্ত্রী রুপা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর সজীবের দুই সন্তান—পাঁচ বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিন ও তিন বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত—দাদার (আবুল খায়ের কাজী) সঙ্গে বসবাস করতে থাকে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরে সজীব দ্বিতীয় বিয়ে করেন জোবাইদা বেগমকে।
২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে শিশু নুসরাতকে তার বড় ভাই ইয়াসিন মারধর করলে সে কান্না শুরু করে। এরপর সৎ মা জোবাইদা বেগম তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যান এবং কান্না থামাতে না পেরে শিশুটির মুখ চেপে ধরেন। এতে শ্বাসরোধ হয়ে নুসরাতের মৃত্যু হয়।
পরে শিশুটির মরদেহ একটি কম্বলে মুড়িয়ে শ্বশুর খায়ের কাজীর ঘরের বারান্দার খাটে রেখে দেন তিনি।
দাদা খায়ের কাজী বাড়ি ফিরে নুসরাতকে গোসল করাতে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে স্ত্রী পান্না বেগমকে জানান। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পান্না বেগমের প্রশ্নের জবাবে জোবাইদা জানান, নুসরাত বারান্দায় ঘুমাচ্ছে। সেখানে গিয়ে নুসরাতকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান দাদী।
পরিবারের সদস্যরা পরে পুলিশে খবর দিলে লোহাগড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ঘটনার দিনই পুলিশ সজীব কাজী ও জোবাইদা বেগমকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় সজীবকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরদিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) নিহত শিশুর দাদা খায়ের কাজী লোহাগড়া থানায় জোবাইদা বেগমকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বুধবার দুপুরে আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে