ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ঘটনায় ‘জরিমানা’ হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৬ আগস্ট) এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে তিনি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়ালো ৫০ শতাংশে—যা এখন পর্যন্ত চীন, পাকিস্তানসহ অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের চেয়েও বেশি।
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে বলে জানায় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
নতুন নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প লিখেছেন,“ভারত সরকার রুশ ফেডারেশন থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে—পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে। আমার বিবেচনায়, ভারতের রফতানি পণ্যের ওপর অ্যাড ভ্যালোরেম ভিত্তিক (মূল্যভিত্তিক) অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা যুক্তিসঙ্গত।”
এর আগে গত ৩০ জুলাই এক হুঁশিয়ারিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে সেই হুমকি এবার কার্যকর করলেন তিনি।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো নির্দিষ্ট কিছু পণ্য এবং ওষুধসহ সংবেদনশীল খাতের ওপর পূর্বের মতোই শুল্ক ছাড় বহাল থাকবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, নতুন এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর গড় শুল্ক হার এখন ৫০ শতাংশ। তুলনায় চীনের ক্ষেত্রে শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের জন্য ২৯ শতাংশ। এই পার্থক্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা বহন করছে।
এক মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন,“ভারত ভালো বাণিজ্য অংশীদার নয়। তারা প্রচুর ব্যবসা করে, কিন্তু আমাদের জন্য দরজা বন্ধ। আমি মনে করি, শুল্ক বাড়ানোর সঠিক সময় এখনই।”
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়ায় জানায়,“বিশ্বের বহু দেশ এখনও রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র নিজেও রুশ তেল আমদানি বন্ধ করেনি। এককভাবে ভারতকে টার্গেট করা সমতাভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিপন্থী।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক চাপের অংশ হিসেবেও দেখছে নয়াদিল্লি।
ট্রাম্প প্রশাসন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকটি দেশের ওপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির আওতায় শুল্ক আরোপের কথা বলেছিল। সে সময় ভারতসহ কয়েকটি দেশের জন্য আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্প সেই সময়সীমার মধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন,“ভারতের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক হার এবং অ-আর্থিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কিন্তু বাণিজ্যে ভারসাম্য চাই।”
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা বাণিজ্য পদক্ষেপ ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাই নয়, কূটনৈতিক সম্পর্কেও উত্তেজনা ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে