গত চার মাস ধরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই কোনো ঔষধ সরবরাহ। এতে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ১৮১ জন গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন চলছে শুধু পেশার মাপা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শ দিয়ে সেবা কার্যক্রম। তবে খুব দ্রুত এ সংকট কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, কোটচাঁদপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৫ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ১৮১ জন গ্রামে বসবাস করেন। এ সব মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা হচ্ছে উপজেলায় অবস্থিত ১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
ক্লিনিকগুলোর মধ্যে রয়েছে—চতুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে রনি আহমেদ, লক্ষিকুন্ডুতে আদুরি খাতুন, সাবদারপুরে মাছুরা খাতুন, শ্রীরামপুরে নুপুর খাতুন, সোয়াদিতে তাহেরুল ইসলাম, লক্ষিপুরে তরিকুল ইসলাম, দয়ারামপুরে বনমালী কর্মকার, হরিণদিয়ায় হাফিজুর রহমান, ব্রহ্মপুরে সানজিদা খাতুন, তালিনায় মনিরুল ইসলাম, বলুহরে সোহান ইসলাম, কাগমারিতে রাবিয়া ইয়ামিন, ফুলবাড়িতে জেসমিন আরা, মঙ্গলপুরে রিয়াদ হোসেন, আসাননগর কুল্লাগাছায় মনিরুজ্জামান এবং গুড়পাড়ায় রিমা খাতুন দায়িত্ব পালন করছেন।
ঔষধ সংকটের কারণে রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। গুড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা জুলেখা বেগম (৬০) বলেন, “গ্যাসের বড়ি, এলার্জির ও মাথাব্যথার ঔষধ নিতে এসেছিলাম, কিন্তু কিছুই পেলাম না। শুধু আইরন বড়ি আর কৃমির ট্যাবলেট দিয়েছে। রোজার মাসের পর থেকে আর কোনো ঔষধ পাচ্ছি না।”
কুল্লাগাছা আসাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া খাতুন, জাকিয়া খাতুন ও মোছা আরবি খাতুনও ক্লিনিকে এসে ঔষধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান। দায়িত্বরত সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) মনিরুজ্জামান জানান, “গেল এপ্রিল মাসের পর থেকে কোনো ঔষধ সরবরাহ নেই। এমনকি স্যালাইনও নেই। রোগীদের শুধু স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।”
ফুলবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসমিন আরা বলেন, “ঔষধ না থাকায় রোগীর সংখ্যাও কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৭০-৮০ জন রোগী আসত, সেখানে এখন মাত্র ১৫-২০ জন আসে। অথচ তাদেরও প্রয়োজনীয় ঔষধ দিতে পারছি না।”
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান বলেন, “আমার জানা মতে কোথাও কিছু ঔষধ এখনো আছে, আবার কোথাও একেবারেই নেই। খুব দ্রুত এ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
একুশে সংবাদ/ঝি.প্র/এ.জে