ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীর ভাঙনে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি মালামাল ভাঙারি দোকানে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাসিন্দার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীরে ১৩০টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়। শুরুতে ঘরগুলোতে মানুষ বসবাস শুরু করলেও, নদীভাঙনের কারণে গত তিন বছরে অন্তত ১০০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বর্তমানে অবশিষ্ট আছে একটি অফিসকক্ষসহ প্রায় ৩০টি ঘর। তবে চলতি বছরে অফিসকক্ষসহ আরও চারটি ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ সুযোগে কিছু ব্যক্তি ঘরের ঢেউটিন, লোহার অ্যাংগেল ও ইট খুলে ভ্যানে করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইমরুল শেখ ইমুল, আরিফুল শেখ ও মুকুল শেখ রাতের আঁধারে সরকারি মালামাল বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তারা এসব মালামাল পাশের বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজারের ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেছেন। তাদের বাড়ির সামনে এখনো কিছু মালামাল মজুত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ১০ দিনে নদীগর্ভে চারটি ঘর ও একটি অফিসঘর বিলীন হয়েছে। ইমরুল শেখ ও আরিফুল শেখের বাড়ির সামনে এখনও লোহার অ্যাংগেল ও ইটের স্তূপ পড়ে আছে।
ইমরুল শেখ বলেন, “অফিসঘরটি নদীতে ভেঙে যাচ্ছিল, তাই মালামাল খুলে নিজের ঘরের সামনে রেখেছি। এগুলো বিক্রি করা হয়নি।” তিনি স্বীকার করেন, কয়েক বছর আগে ১০ মণ লোহার মালামাল বিক্রি করেছিলেন, তবে পরে ইউএনও অফিসে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তা ফেরত দেন।
আরিফুল শেখের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, “নদীভাঙনে দেবরের ঘর ভেঙে যাওয়ায় মালামাল আমাদের কাছে রাখা হয়েছে। এগুলো বিক্রির জন্য নয়, বরং নতুন ঘর তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।”
চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আকুব্বর শেখ বলেন, “শুরুতে এখানে ১৩০ পরিবার ছিল, এখন মাত্র ৩০ পরিবার অবশিষ্ট। ঘরের মালামাল বিক্রির বিষয়ে নিশ্চিত নই।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম কালু বলেন, “নদীভাঙনের সুযোগে কিছু লোক সরকারি মালামাল বিক্রি করছে। ঘরগুলো নির্মাণের সময় নদী এক কিলোমিটার দূরে ছিল, কিন্তু এখন নদী এসে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে গেছে।”
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। এগুলো সরকারি সম্পত্তি—তাই মালামাল বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে