AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভাল নেই দক্ষিণ অঞ্চলের পাটকল শ্রমিকরা


ভাল নেই দক্ষিণ অঞ্চলের পাটকল শ্রমিকরা

"এখন আর কোন আশা নাই? পাটকল শ্রমিকদের দুর্ভিক্ষের চলছে তাদের জীবন"। তারপরও প্রতিদিন মিলের গেটে আছি। পুরানো দুই-চারজনের সাথে দেখা হয়। বাকীরা সবাই তো চলে গেছে। আমরা কয়জন মাত্র পড়ে আছি। ১৫ থেকে ২০ বছর মিলে  কাজ করছি? বুকের ভিতর  একটা মায়া হয়ে গেছে। তাই কষ্ট হলেও কোথাও যেতে পারিনা। টুকটাক কাজকর্ম করে দিন চালাচ্ছি। কষ্ট নিয়েই বেঁচে আছি।’

 

প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের ২ং  গেটে  শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে চায়ের আড্ডায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পাটকল শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ  (৪০)। প্রায় তিন বছর আগে আরো কয়েক হাজার শ্রমিকের সাথে তিনিও কর্মহীন হয়েছিলেন। অল্পদিনের স্থায়ী চাকুরিতে যে দেনা-পাওনা পেয়েছিলেন, তার খুব জমা নেই। নিত্য পণ্যের মূল্য উর্দ্ধগতিতে হিমশিম খাওয়া আবুল কালাম  এখন আয়ের উৎস শুধু ইজিবাইক চালিয়ে।

 

শুধু আবুল কালাম একাই নন, খুলনায় একের পর এক সরকারি-বেসরকারি পাটকল, শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ায় শিল্পাঞ্চলখ্যাত খালিশপুর, দৌলতপুর, আফিলগেট, ইস্টার্ণগেট, রূপসা এলাকা অনেকটাই বিষন্ন। কাজ না থাকায় অধিকাংশ শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। কেউ কেউ পেশা পাল্টে নতুন কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন। আবার কেউ স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা বা দিনমজুরী করে জীবন নির্বাহ করছেন। ফলে "মহান মে দিবস" ঘিরে খুলনা অঞ্চলের শ্রমিকদের উচ্ছ্বাস থমকে গেছে। এমন অবস্থায় আজ পালিত হবে "মহান মে দিবস"।

 

জুটমিল শ্রমিক আবুল কালাম জিয়া বলেন, গত (২০২০ সালের ২ জুলাই) সরকার (২৫টি) রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকার দুই মাসের ভিতরে সকল শ্রমিকের সকল পাওনা টাকা পরিশোধ ও তিন মাসের মধ্যে বন্ধ সকল মিলের উৎপাদন চালুর প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। কিন্তু গত ৩২ মাস হয়ে গেলেও স্থায়ী শ্রমিকের সঞ্চয় পত্র ও অনন্য পাওনা পরিশোধ হয়নি। শ্রমিকরা বেকার হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা রয়েছে বহাল তবিয়তে।

 

তারা জানান, বিশেষ করে খালিশপুর, দৌলতপুর, জাতীয়, কেএফডি ও আর আর জুটমিলের অনেক স্থায়ী শ্রমিকের সঞ্চয়পত্র, ঈদের বোনাস, ছুটির পাওনা, শিক্ষা ভাতা জোটেনি। তারা কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছে। এমন অবস্থায় আমরা তো মে দিবস কি তা ভুলে গেছি।   
                    

মহান মে দিবস আজ। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সে-ই  দিন আজ। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। প্রতিবছর ১মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। (১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা) কাজের দাবিতে "১৮৮৬" সালের এই দিন রাস্তায় নামেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। আর এই শ্রমিকদের ওপর গুলি চলে। এতে নিহত হন (১১ জন) তরতাজা শ্রমিক। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে "যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়"। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

 

বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে ঈদের ছুটির মধ্যেও এবার দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন  এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীরা প্রথমে বিচ্ছিন্ন এবং পরে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে এসেছে। এ সংগ্রামের মাধ্যমে এক সময় দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও শ্রমিকের কাজের কোনো ধরাবাঁধা সময় ও নিয়ম ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ায় কলকারখানায় সপ্তাহে (৬ দিন) গড়ে প্রায় (১০-১২) ঘণ্টার বেশি অমানুষিক পরিশ্রম করতেন শ্রমিকরা। বিনিময়ে মিলত সামান্য মজুরি। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তাও ছিল না তাদের। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লড়াই শুরু হলেও তা বিরাট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকায়।

 

(১৮৮৬ সালে যা চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপ নেয়)। ওই বছরের "১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠেন"। হে মার্কেটের কাছে তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১১ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হয় এবং বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়। (১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়)। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে।

 

মহান মে দিবসে আজ সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শোভাযাত্রা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।


একুশে সংবাদ.কম/সম 

Link copied!