জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্থানীয় উদ্ভাবন ও টেকসই সমাধান নিয়ে দুই দিনব্যাপী ‘ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম (ফিফ) ২০২৫’ শুরু হয়েছে। শুক্রবার ব্র্যাকের উদ্যোগে সাভারের সিডিএমে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য—‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় জলবায়ু অভিযোজন’।
সম্মেলনের উদ্বোধনে অংশ নেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং অনলাইনে যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’-এর মহাসচিব ও মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। এছাড়া দেশ-বিদেশের ২০০ জনেরও বেশি জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও উদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন এই ফোরামে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘বিশ্ব এখন জলবায়ু সংকটে জর্জরিত। প্রতিবছর এই সংকটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার বড় অংশের ভার বহন করতে হচ্ছে বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু অভিযোজন শুধু টিকে থাকার লড়াই নয়, এর সঙ্গে জীবিকা, মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জড়িত।’
মূল বক্তব্যে মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অনুকূল নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো টেকসই অবকাঠামো গড়তে পারছে না, কারণ জলবায়ু অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এখনও সীমিত এবং ঋণপ্রাপ্তি ব্যয়বহুল।’ তাই তিনি যুক্তিসংগত ও সহজ শর্তে অর্থায়ন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
ফোরামের প্রথমদিন ইমপ্যাক্ট টক ও উদ্ভাবনী প্রদর্শনীতে জলবায়ু সহনশীল কৃষি, প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যসেবা, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু বীমা, জলবায়ুসহনশীল বীজ ও কৃষিতে বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।
ব্র্যাকের ‘ফ্রুগাল ইনোভেশন ফেলো’ হিসেবে নির্বাচিত উদ্ভাবক—কেনিয়ার এসথার কিমানি, রুয়ান্ডার ঘিসলেইন ইরাকোজে ও বাংলাদেশের মুবাসসির তাহমিদ—তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে তুলে ধরেন কীভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে স্থানীয়ভাবে জলবায়ু সহনশীল সমাধান সম্ভব।
প্রদর্শনীতে অংশ নেয় সাজিদা ফাউন্ডেশন, উইগ্রো, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ইনসিউর কাউ, আইফার্মার ও গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তারা দেখিয়েছে কীভাবে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন কৃষকদের অনিশ্চিত আবহাওয়া, ফসলের ক্ষতি ও বাজারজাতকরণে সহায়তা করছে।
শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য দেবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সমাপনী ভাষণ দেবেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
২০১৩ সাল থেকে ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম গ্লোবাল সাউথভিত্তিক উদ্ভাবন ও জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবারের বার্তা স্পষ্ট—শুধু জনগণের জন্য নয়, তাদের সঙ্গে নিয়েই গড়ে তুলতে হবে একটি জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ।



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

