১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামের এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিজয় দিবস মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের ছবিটি। গভীরভাবে স্বরণ করতে চায় সেই ছবির পেছনের ব্যক্তিগুলোকে যারা যুদ্ধ করেছে, রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, যুদ্ধ করতে চেয়েছেন ও স্বাধীন হতে চেয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও প্রশ্ন থেকেই যায় "আমরা কি স্বাধীন "।
বিজয় আসে মূলত স্বাধীন হতে চাওয়া থেকে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আমরা যতবার পরাধীন হয়েছি ঠিক ততবারই স্বাধীন হতে চেয়েছি। সে ইংরেজদের ২০০ বছরের শাসন ও নিপীড়নকে বাংলা থেকে উচ্ছেদ। সেখান থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পরাধীন থেকে যায় পূর্ব পাকিস্তান। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বীজ বপন শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার। যার ফলে ৫৪`র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২`র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬`র ছয় দফা, ৬৯`র গণঅভ্যুত্থান, ৭০`র সাধারণ নির্বাচন, ৭১`র অসহযোগ আন্দোলন এবং পরিশেষে ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করি । ডিসেম্বর মাসে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা সহ দেশের সকল সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গ্রাম, শহরে নানান রকমের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই কি আমাদের বিজয় উল্লাস সীমাবদ্ধ, আমরা কি সারাবছর স্বরণ কি সেই মানুষদের যাদের জন্য এই বিজয়। আমরা প্রাণ ভরে স্বাদ নিতে চাই প্রকৃত স্বাধীন হওয়ার।
পলাশীর প্রান্তরে মীরজাফরের খামছে ধরা বাংলার স্তমিত সূর্য ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুজিবের তর্জনী ও জিয়ার বজ্রকন্ঠে বিশ্বমানচিত্রে নবউদয় হয় ``সোনার বাংলাদেশ`` । কঙ্কালসার কৃষকের ঝাঁ চকচকে কাস্তে, নাখালপাড়ার শ্রমিকটার ঘামভেজা বিবর্ণ শার্ট,কম্পিত হাতে শিল্পাচার্য জয়নুলের জানোয়ার রং-তুলি, ছকিনা বিবির স্তনে শকুনের ছাপ, আপারময় জনসাধারণের সহস্রাব্দ ত্যাগের এ বাংলাদেশ __বিশ্বমানচিত্রে ক্রিকেটের পরাশক্তি, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে ক্যাপ্টেন, বিশ্বের চমকপ্রদ বস্ত্রের যোগানদাতা,ইলিশের অভরায়ন্য __ এ বাংলাদেশকে পৃথিবী অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয় । টুপি-সিঁদুর-চিবর-ক্রুস হাতে হাত রেখে বিশ্বকে শাসন করবে __এমন প্রত্যাশিত বাংলাদেশ আমাদের চাই
রেহেনা আক্তার
ইতিহাস বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
লাখো শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। বিজয় দিবস বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ,বীরত্ব ও সংগ্রামের প্রতীক।আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো শোষন, বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে।স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনও শোষন-বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পারিনি। প্রতিটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যায় দুর্নীতি।এখনই সময় আমাদের নিজেদের সুনাগরিক হওয়ার শপথ গ্রহন করে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার অঙ্গীকার করার। সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায় জনসাধারণকে সংখ্যালগু-সংখ্যাগুরু ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত না করে সবাই “বাংলাদেশী” এই মর্যাদায় আসীন হোক।
মো: রাকিব হোসেন
অর্থনীতি বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মহান বিজয় দিবস বাঙ্গালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এ বিজয়ের পিছনে ছিল অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম।
বিজয় দিবস আমাদের কাছে শুধু একটি জাতীয় দিবস নয় ; এটি স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য বোঝার দিন।একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের স্বপ্ন—একটি উন্নত, শিক্ষিত, প্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ে ওঠা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক সম্মান ও নিরাপত্তায় বাঁচবে। বিজয় দিবস আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য নতুন এক অঙ্গীকার করতে সাহায্য করে।
আফরিনা তিথি
সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৬ই ডিসেম্বর - এটি শুধু একটা তারিখ নয় বরং বাঙালির সংগ্রাম, ইতিহাস আর স্বাধীনতার প্রতীকে বহন করে।একটি দেশকে স্বাধীন করতে শুধু সশস্ত্রবাহিনীই যথেষ্ট নয়। বর্তমানে আধুনিকতায় প্রযুক্তির স্বর্ণযুগে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বাধীনতা শব্দটি শুধুমাত্র স্বদেশকে রক্ষা করায় আবদ্ব নয় বরং বহুমাত্রিক। বিজয় মানে কেবল শৃঙ্খল ভাঙা নয়, বরং নতুন অধ্যায়ের সূচনা যেখানে প্রতিটি নাগরিকের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে বৈষ্যমহীন, ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট কাঠামো।
এই বিজয় বাঙালির এক প্রজন্মের থেকে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে রেখে যাচ্ছে এক স্বপ্নময় দেশ। সেই স্বপ্নকে নিজ অন্তরে লালন করে গড়ে তুলতে হবে আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, বৈষ্যম মুক্ত, দায়িত্বশীল ও শতভাগ শিক্ষিত নাগরিক বাংলাদেশ।
শেখ শিফাত
কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ - ২০২৫ দীর্ঘ ৫৪ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তার কতটা পূরণ হয়েছে?
২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনে মধ্যে বাংলাদেশ আবারো নতুনভাবে জন্ম নিয়েছে। নতুন প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশকে সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে।
সকলক্ষেত্রে দুর্নীতি, কালোবাজারি নির্মূল করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগতে হবে। দেশে উন্নত গবেষণা কেন্দ্রের বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের দক্ষ সন্তানদের কাজে লাগাতে পারলে দেশের পরিবর্তন করা সম্ভব।
তাজকেরাতুন আম্বিয়া
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালের বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক, যেখানে জাতি সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। বিজয় দিবস আমাদের মনে গর্ব জাগায়—যে আমাদের পূর্বসূরীরা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। একই মনোভাব জুলাই আন্দোলন স্পষ্ট লক্ষ্যনীয়। কারণ দু’টিই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক। আমরা মনে করি ১৯৭১-এর ইতিহাস এটা শুধু ইতিহাস নয়, আামদের বেঁচে থাকার প্রতীক । তাই এই দুই ঘটনার প্রতি আমাদের অনুভূতি জাতিকে আরও সচেতন, সাহসী ও ন্যায়বিচারকামী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে উৎসাহ দেয়।
আরিফ রাহাত
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

