বাংলাদেশের ৪৩ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জামালপুর জেলা শহর থেকে ১১কি. মি অদূরে মালঞ্চ বাজারের উপকণ্ঠ অবস্থিত জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
বর্তমানে ৪টি অনুষদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ টি বিভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নানারকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । গৌরব ও সাফল্যের ৮ বছর পেরিয়ে আগামী ২৮ নভেম্বর পদার্পণ করতে যাচ্ছে ৯ বছরের। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়টি এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। ৯ম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে জাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন, তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন পাবলিকিয়ান টুডে এর প্রতিনিধি আল শাহারিয়া,কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান দূর্জয় বলেন,এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি "স্বপ্ন দেখার সাহস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন আমাদের প্রতি যে আন্তরিকতা দেখায় তা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন দেখায় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
আমি স্বপ্ন দেখি অন্যান্য বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদেরও থাকবে অনেক সুন্দর এবং গুছানো একটি ক্যাম্পাস যেখানে শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুন্দর মেলবন্ধন গড়ে উঠবে।গবেষণার জন্য পরিমিত সুযোগ এবং পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি থাকবে। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট এই থাকবেন পর্যাপ্ত পরিমান সুদক্ষ শিক্ষক যারা শিক্ষার্থীদের মনের ভাষা বুঝবে,এবং শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্তিতে যথেষ্ট ভুমিকা রাখবেন। আমিদেখতেচাই,প্রত্যেকবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গবেষনা করবে এবং আমাদের এই বাংলাদেশ বিনির্মানে ভুমিকা রাখবে।
আমি স্বপ্ন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর জন্যই আবাসনের ব্যাবস্থা হবে,কোনো শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কষ্ট করতে হবে না।এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক হল নির্মান প্রয়োজন।
পরিশেষে এতটুকুই বলবো,এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া হচ্ছে দ্রুত ডিপিপি পাসের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মান করা। অর্থাৎ আমরা চাই,আরোবেশি সুযোগ,আরো বেশি সম্পদ,আরো বেশি দিক নির্দেশনা।
ফিশারিজ বিভাগের ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সানজিদা রহমান মারফি বলেন, বলা হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় হল বিশ্ব জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞান অর্জনের প্রবল আকাঙ্খা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা অনেক ছোটবেলা থেকেই ছিল। সেই ইচ্ছা থেকেই পড়ার সুযোগ হল জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মাধ্যমে পাশাপাশি রয়ে গিয়েছে কিছু অনেক স্বপ্ন পূরণ হওয়া ও অপূর্ণতা, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে একজন পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নিজেকে একজন পাবলিকিয়ান বলতে পারি, একটি পছন্দের সাবজেক্টে পড়তে পেরেছি এবং একাডেমিক ভাবে আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালোও করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। তিন বছরে অনেক ভালো কয়েকজন বন্ধু পেয়েছি এবং অনেক সুন্দর কিছু স্মৃতিবিজরিত মুহূর্ত আছে যা মনে থাকবে সারাজীবন।
তবুও কিছু অপ্রাপ্তি রয়ে গিয়েছে। যেমন ফেসিলিটি চেয়েছিলাম তার অনেক কিছুই এখানে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেহেতু আমি এখন থার্ড ইয়ারে আর বেশিদিন ক্যাম্পাসে থাকা হবে না। তবুও আমি চাই যেসব সুযোগ-সুবিধা যা আমি পাইনি, থাকুক যেসব সুযোগ-সুবিধা যা আমি পাইনি। আমি চাই গবেষণায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে থাকুক। শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ করে দেয়া হোক। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের পেপার পাবলিশ করতে পারে। অনার্সে পড়াকালীন আমরা যেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীলের জন্য এপ্লাই করতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে যেন পর্যাপ্ত একাডেমিক বই থাকে। লাইব্রেরিতে দুইটি পার্ট থাকবে। একটি একাডেমিক পড়াশোনা করার জন্য এবং অন্যটি থাকবে যারা চাকরির জন্য পড়াশোনা করতে চায়, তাদের জন্য। যেসব শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য প্রস্তুতি লাইব্রেরিটি সপ্তাহে সাতদিন খোলা থাকবে।
সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চাই। একটি সুন্দর একাডেমিক ভবন এবং একটি অডিটোরিয়াম।ভবিষ্যতে যখন সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসব, তখন যেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে যেন। আমি গর্ব করে বলতে চাই, আমি জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একজন শিক্ষার্থী ছিলাম।
বিভাগের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী মজুল ত্রিপুরা বলেন, “ভবিষ্যতে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন এক সমৃদ্ধ, গবেষণাভিত্তিক ও প্রযুক্তি-নির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও বাস্তবমুখী দক্ষতা বিকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ পাবে। আমি চাই আমার ক্যাম্পাস ক্রিশাঅঙ্গনে আরো এগিয়ে যাক।আমাদের ক্যাম্পাস থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে, শিক্ষক–শিক্ষার্থী যোগাযোগ আরও উন্মুক্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।
এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শুধু পাঠ্যজ্ঞানই দেয়নি দিয়েছে মূল্যবোধ, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, দলগতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের সুযোগ। ক্লাব, ইভেন্ট, প্রতিযোগিতা আর গবেষণার মাধ্যমে আমি আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি, আর পেয়েছি আজীবন মনে রাখার মতো সম্পর্ক ও শেখার অভিজ্ঞতা। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় এটি আমার ব্যক্তিত্ব গঠনের ভিত্তি।”
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর আহম্মেদ রাফি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-নির্ভর ও আধুনিক গবেষণা-ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার একটি অপার সম্ভাবনা। আমাদের বর্তমান —সিএসই, ইইই, ফিশারিজ, ম্যাথ এবং জিওলজির মতো বৈচিত্র্যময় বিভাগগুলোর মেলবন্ধনে—আমরা সেই ভিত্তি তৈরি করব, যা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্ভাবনী কেন্দ্রে পরিণত করবে।"
"আমার আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত স্পষ্ট: বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উন্নত প্রযুক্তি-নির্ভর প্ল্যাটফর্মে উন্নীত করা, যেখানে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে আধুনিক গবেষণা করবে। এর জন্য চাই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং ডেটা সায়েন্সকে মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যেন তারা কেবল AI ব্যবহারকারী না হয়ে, বরং AI-ভিত্তিক উদ্ভাবক হয়—যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্থানীয় ও বৈশ্বিক সমস্যার স্মার্ট সমাধান দিতে পারে।"
"আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও এই লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকলে, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুতই একটি আধুনিক গবেষণা নির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীই হবে এই মহান যাত্রার প্রেরণা ও চালিকাশক্তি।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

