জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অপমান, খাতার অবমূল্যায়ন এবং মানসিক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এ অভিযোগসংবলিত একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেন সজিবুর রহমান নামে ওই শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছেন এবং খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে অপমানজনক মন্তব্য ও রাজনৈতিকভাবে ট্যাগিং করছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক অনেকসময় টিউটোরিয়াল বা অ্যাসাইনমেন্টের খাতা না দেখেই ইচ্ছামতো কম নম্বর প্রদান করেন। এমনকি একজন শিক্ষার্থীকে প্রথম টিউটোরিয়ালে কম নম্বর দেওয়ার অজুহাতে দ্বিতীয় টিউটোরিয়াল খাতা না দেখেই একই নম্বর দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, একই ধরনের উত্তরের ক্ষেত্রে কেউ পূর্ণ নম্বর পেলেও অন্য কেউ কম নম্বর পেয়েছেন—যা মূল্যায়নে পক্ষপাতের শঙ্কা বাড়ায়।
এছাড়া অভিযোগকারীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, শিক্ষক কখনো কখনো শিক্ষার্থীর দাড়ি, পোশাক বা মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিত্তিতে ‘শিবির’ বা ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে অপমান করেন। বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধি (সিআর) ও আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীও তার রূঢ় ব্যবহার, হুমকি এবং অবমাননাকর মন্তব্যের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগকারী জানান, শিক্ষক বছরের অধিকাংশ সময়ে ক্লাস না নিলেও পরীক্ষা শুরুর কিছুদিন আগে হঠাৎ হাতে লেখা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে বলেন, যা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ব্যাহত করে।
অভিযোগ দাখিলের সময় সজিবুর রহমানের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন—
১) সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা যেন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন থেকে বিরত থাকেন;
২) টিউটোরিয়ালসহ সকল খাতার স্বাধীন পুনর্মূল্যায়ন;
৩) অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন ও প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
৪) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক হয়রানি প্রতিরোধে স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
অভিযোগ জমা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিনের আচরণে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এসব ঘটনার পর ভবিষ্যতে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং একাডেমিক নিরাপত্তা সুরক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উবায়দা, কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতি এবং বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থী।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

