বিগত জুলাই অভ্যুত্থানে বিরোধিতার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঐক্য গড়ে উঠেছে। গতকাল রোববার (০৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনে এক বৈঠকে ঐক্য গড়ে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং তাদেরকে যথাযোগ্য শাস্তির দাবিতে সম্প্রতি ঐক্য গড়ে তুলেছেন তারা।
বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ’র সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমসহ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ এস এম শরফরাজ নেওয়াজ, ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাঃ তোজাম্মেল হোসেন, ইউট্যাবের যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম , জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গ্রীন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদ মোহাম্মদ রেজওয়ান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী ও কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঁঝি উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা এই মর্মে একমত হন যে, বিগত জুলাই অভ্যুত্থানবিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে তারা সকলে ঐক্যমত পোষণ করেন৷ তবে এক্ষেত্রে কেউ যাতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এসময় তাদের সকলের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি রেজুলেশন উপাচার্য সংরক্ষণ করেন বলেও জানা গেছে।
এবিষয়ে সাদা দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ এস এম শরফরাজ নেওয়াজ বলেন, আমরা বিচার বা শাস্তির আগে আরেকটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছি। যে অভিযোগটি আসছে, রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুঁটিদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সেটি পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া চলমান শাস্তি নির্ধারণের কমিটির কার্যক্রমও চলমান থাকবে। এছাড়া এই কমিটি গঠনে কয়েকজনের নাম প্রস্তাবও করেছি।
এদিকে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গ্রীন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদ মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, উপাচার্য আমাদেরকে ডেকেছিল। আমরা মিটিংয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার জন্য একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছি।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন৷ পরে প্রত্যক্ষদর্শীকর্তৃক প্রদত্ত লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে এসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী ও নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায় কমিটি। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয় হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত, সনদ বাতিল ও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

