জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শুরু হওয়া প্রথম শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মীর অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রেক্ষিতে ফ্যাসিস্টমুক্ত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও সাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে ছাত্রদল নিয়োগ প্রক্রিয়াই বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রথম নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠলে ক্যাম্পাসে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। রাকিবুল নামের ওই চাকরি প্রার্থী চিহ্নিত ছাত্রলীগ কর্মী এবং ছাত্রলীগের অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগ পুনর্বাসন এবং ফ্যাসিজম কায়েম করছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। একইসঙ্গে এ বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ছাত্রদল এই নিয়োগ পরীক্ষাকে অবৈধ দাবি করলেও বিষয়টিকে তাদের নিজস্ব ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত শিক্ষক নিয়োগ’ নিশ্চিতের দাবিতে শুক্রবার উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এরআগে পরীক্ষা কেন্দ্রের ডিন অফিসে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। এসময় ছাত্রদল নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পরে কেন্দ্রের সামনে ‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ফ্যাসিস্টযুক্ত নিয়োগ বোর্ড, মানিনা মানবো না’, ‘নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য, মানিনা মানবো না’, ‘অবৈধ নিয়োগ, মানিনা মানবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ সহ দলটির অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার লিখিততে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট এক প্রার্থী উত্তীর্ণ হলে ক্যাম্পাসে সমালোচনা ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাবেক সমন্বয়ক ও সচেতন শিক্ষকরা। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড থেকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বোর্ড থেকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাতিলের দাবিতে গত মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচি করে শাখা ছাত্রদল। এদিকে শুক্রবার ল’ ন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের পরীক্ষায়ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ এবং বিভাগের সভাপতি আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে বোর্ড থেকে সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে তারা এ বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এতে লিখিত পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সকাল ১০টায় আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে বেলা ১১টা থেকে আরম্ভ হয়। ফলে পরীক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরীপ্রার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে এমন পরিবেশ পরীক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত রাকিবুল ছাত্রলীগের চিহ্নিত কর্মী এবং ছাত্রলীগের অর্থ এবং অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলেন। গতকাল রাতে তার উত্তীর্ন হওয়ার রেজাল্ট দেখে মনে হচ্ছে শীঘ্রই ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করা হবে। শুক্রবার ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষাতেও ছাত্রলীগ রয়েছে বলে জেনেছি। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেও প্রশাসন পরীক্ষা নিচ্ছে। এভাবে প্রশাসন ছাত্রলীগ পুনর্বাসন এবং ফ্যাসিজম কায়েম করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র হিসেবে মেধার ভিত্তিতে এখানে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। এখানে কে ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটা দেখার বিষয় না। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সবাই পাবে। এটা যাস্ট একটি অভিযোগ আরকি। এবারের শিক্ষক নিয়োগ অতীতের সকল বদনামকে ঘোচাবে। এটি একটি সম্মিলিত প্রক্রিয়া হওয়ায় যেসকল বিভাগের সভাপতিরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা বোর্ডে থাকলেও সুবিধা করতে পারবে না। আর ছাত্রদল যে এই নিয়োগ পরীক্ষাকে অবৈধ বলছে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।’
একুশে সংবাদ/এ.জে