AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সমুদ্রের সবুজ সোনা: উপকূলীয় জীবিকা ও জলবায়ু পরিবর্তনে  শৈবাল চাষে  অপার সম্ভাবনা”



সমুদ্রের সবুজ সোনা: উপকূলীয় জীবিকা ও জলবায়ু পরিবর্তনে  শৈবাল চাষে  অপার সম্ভাবনা”

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা দিন দিন গভীর হচ্ছে। লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়, এবং মৎস্য সম্পদের হ্রাসের মুখে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা আজ হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু এই সংকটের মাঝেই জেগে উঠেছে এক অনন্য সম্ভাবনা—সামুদ্রিক শৈবাল চাষ। 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্ট এবং AIRD-এর যৌথ উদ্যোগে ( পাইলটিং  স্মল স্কেল ম্যাক্রোঅ্যালগি কালচার ফর আমেলিওরেটিং  লিভলিহুড অফ কোস্টাল কমিউনিটিস অ্যান্ড এড্রেসিং কার্বন ডাই অক্সাইড রেমিডেশন ”)  প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই আনবে  না, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায়ও রাখতে  পারে অনন্য অবদান।  

বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা এবং ২৫,০০০ বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় জলরাশি সীউইড চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে দেশে প্রায় ২০০ প্রজাতির সীউইড পাওয়া যায়, যার মধ্যে ১৯টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে  উলভা ইনটেসটিনালিস (Ulva intestinalis) (স্থানীয়ভাবে “ডেললা”) অন্যতম, যা সহজে চাষযোগ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর।  এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, লবণাক্ত পানিতে টিকে থাকে এবং পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। 

প্রধান গবেষক ড. মো. রাজীব সরকারের মতে, " সামুদ্রিক শৈবাল কে আমি সামুদ্রিক সবজি বলে থাকি কারণ এটি উচ্চ মানের প্রোটিন,  ভিটামিন , মিনারেলস থাকে। এখানে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এর কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সীউইড  থেকে বায়োপ্লাস্টিক, বায়োডিসেল  তৈরি করা  যায় , এই লক্ষে আমরা প্রকল্পে  সীউইড থেকে কিছু ভ্যালু এডেড প্রোডাক্ট তৈরি করি। যার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আয়রন এর অভাব পূরণ করে এবং মানুষের মানসিক হতাশা দূর করে, এছাড়াও প্রতি কেজি শুকনো শৈবাল ০.৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে।”  

প্রকল্পের  সাইট হিসেবে বরগুনার কুয়াকাটা, লেবুরচর, গঙ্গামতি ও চোরপাড়া অঞ্চলে রশি ও জালের মাধ্যমে শৈবাল চাষ করা হয়, যেখানে স্থানীয় জেলেরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে গঙ্গামতি ও লেবুরচরে শৈবালের ফলন সবচেয়ে বেশি ।এই শৈবাল চাষের পদ্ধতি অনেক সহজ কারণ এতে জমি বা রাসায়নিক সারের প্রয়োজন নেই।  

এই উলভা শৈবালের গুঁড়া থেকে তৈরি হচ্ছে নানা রকম মূল্য সংযোজিত পণ্য,  যা স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুন গতি দিতে পারে। তারই পরিপেক্ষিতে তারা তৈরি করেছে নানা রকম পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ খাবার সহ ব্যবহারিক জিনিস পত্র যেমন নরি শিট ; এটি  জাপানি সুশিতে ব্যবহৃত হয় ও প্রোটিনসমৃদ্ধ । সেই সাথে  রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে। সীউইড ট্যাবলেট;  আয়োডিন, আয়রন,  ভিটামিন 12 ও  খনিজ সমৃদ্ধ এই ট্যাবলেট হজম ও থাইরয়েড হরমোন ব্যালান্স করতে সাহায্য করে |  

সীউইড আইসক্রিম;  ২৫% দুধের পরিবর্তে উলভা ব্যবহার করে খনিজ সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর এই খাবার টি শহুরে স্বাস্থ্যসচেতন দের কাছে এটি জনপ্রিয় হতে পারে।  এছাড়া আরো তৈরি করা হয়েছে সীউইড দিয়ে বিস্কুট, জিলাপি, মিষ্টি , রোল সহ সাবান ও ফেসপ্যাক; যা স্থানীয় বাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে  এসব পণ্যের ব্যপক চাহিদা হতে পারে। পরীক্ষামূলক ভাবে এসব পণ্য ব্যবহার করে সুফল ও  পাওয়া গেছে।  ফেসপ্যাক ব্যবহার করে এক শিক্ষার্থী মাহজাবিন বলেন, "এটি ব্যবহারে ত্বক নরম ও মসৃণ থাকে, সেই সাথে ত্বক ঠান্ডা থাকে" ।  

বিভিন্ন খাবারের টেস্ট পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষার্থীরা এই পণ্যগুলোর ব্যাপারে অনেক সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেন। আশিকুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, "আমি সীউইড  সম্পর্কে আগে শুনেছি, এখন খেয়ে দেখলাম আসলেই এগুলোর স্বাদ অতুলনীয়, এগুলো বাজারে আসলে ভালো মার্কেট চাহিদা পাবে বলে আমি আশাবাদী, সেই সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি .."।। 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সীউইড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  সীউইড চাষের মাধ্যমে প্রতি কেজিতে প্রায় ০.৭ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষিত হয়। এটি “ব্লু  কার্বন ” ধারণার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে সামুদ্রিক উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়তা করে। সীউইড চাষে যুক্ত হয়ে লাভবান হতে পারবে স্থানীয় জেলে, নারী ও বেকার যুবকরা। UNDP, ILO, এবং Innovision Consulting-এর মতো সংস্থাগুলোর সহায়তায় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে। কক্সবাজারে একটি ৪৫–৬০ দিনের চাষচক্রে একজন চাষি গড়ে ১২,০০০–১৫,০০০ টাকা আয় করছেন।এটি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন  করা সম্ভব। বিশ্বে সীউইডের বাজার ২০২৮ সালের মধ্যে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, এর সম্ভাবনা অফুরন্ত। AIRD-এর সহকারি  গবেষক ড. মো. আরিফুল আলমের ভাষায়,  "এই সীউইড গুলো উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ও চাষের ব্যপক সম্ভাবনা আছে। সীউইডে থাকা ওমেগা 3 এবং ওমেগা 6 ফ্যাটি এসিড শিশুর মেধা বিকশিত করে ,গ্যাস দূর করে, কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই এই সম্ভবনা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে উপকূলীয় অঞ্চল হবে টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল।”  

সর্বোপরি উলভা শৈবাল শুধু একটি সবুজ উদ্ভিদ নয়—এটি উপকূলবাসীর জন্য আশার বার্তা বয়ে এনেছে। জলবায়ু সংকটের এই যুগে, প্রকৃতির সহজ সমাধানই হয়তো আমাদের রক্ষার শেষ অবলম্বন। সমুদ্র আজ শুধু মাছের ভাণ্ডার নয়, এটি হয়ে উঠতে পারে সবুজ অর্থনীতির নতুন চাবিকাঠি ।

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - ক্যাম্পাস

Link copied!