ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সহ-সমন্বয়ক পরিচয়ে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ট্রান্সপোর্ট কমিউনিটি’ ফেসবুক গ্রুপ দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রাকিবুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেলের কেউ নন বলে নিশ্চিত করেছেন ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট।
এদিকে পরিবহন প্রশাসকের কাছে একাধিকবার বর্তমান গ্রুপটির অ্যাডমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা ও ‘ছাত্রলীগ’ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে সরানোর দাবি জানায়। আজ সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় রাকিব সহ আল-ফিকহ এন্ড ল’ বিভাগের ২০১৮-১৯ হাসিব আল সজিব আবারো পরিবহন প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে দাবি জানিয়ে আসেন। তারা উভয়ই সাবেক সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসানের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এদিকে এই ঘটনার পর সোমবার বিকেল ৪টার দিকে গ্রুপে ঘোষণা দিয়ে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেন গ্রুপের অ্যাডমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের নির্দেশনায় তিনি এটি বন্ধ করেছেন বলে পোস্টে উল্লেখ করেছেন। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবহন প্রশাসক স্যারের নির্দেশক্রমে পেজ, গ্রুপ ও টেলিগ্রাম চ্যানেল কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। আরেক পোস্টে লিখেন, রাজনৈতিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেকুজ্জামান অবসান দীর্ঘদিন ধরে ট্রান্সপোর্ট কমিউনিটি নামে একটি গ্রুপ, পেজ ও টেলিগ্রাম বট পরিচালনা করছেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবহনের সময়সূচি সহ বিভিন্ন সমস্যার সেবা পেয়ে থাকেন।
কিছুদিন আগে ওই গ্রুপের একটি পোস্টের কমেন্টে রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে অ্যাডমিন প্যানেলের একপ্রকার কথা কাটাকাটি হয়। সেই থেকে অ্যাডমিনের প্রতি রাকিবের ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্ম নেয়। এর ফলে অ্যাডমিনকে ফ্যাসিস্ট ও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে তারা অ্যাডমিন বানানোর জন্য পরিবহন প্রশাসককে ‘পছন্দের ব্যক্তি’ খুঁজে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, পেজটির অ্যাডমিন বিভিন্ন সময় সময়উপযোগী সেবা দিয়ে এসেছেন। তার অবদান অনস্বীকার্য। সম্প্রতি তাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে ওই জায়গা দখল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দানকারী প্রভাবশালী এক শিক্ষার্থী।
আবদুল্লাহ আল নোমান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ট্রান্সপোর্ট কমিউনিটি নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি করলেন তাদের মুখে থুথু মারি। নিজের সবকিছু বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য যা করেছেন স্বর্ণাক্ষরে লিখলেও কম হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি অবসানকে সরাসরি ছাত্রলীগ বলিনি। সে ছাত্রলীগ না আমি নিজেও জানি। তবে সে ছাত্রলীগের আমলে তাদের শেল্টারে বিভিন্ন সময় পরিবহন দপ্তরে প্রভাব খাটাতো বলে কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছে। সে এখনো কীভাবে বহাল থাকে? আমি জেনেছি সে সাবেক পরিবহন প্রশাসক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আনোয়ার স্যারের আত্মীয়। তবে কেমন আত্মীয় জানি না। তাই আমি বর্তমান প্রশাসক স্যারকে বলেছি তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমাকে অ্যাডমিন দেন বলিনি। প্রয়োজন হলে বেটার কাউকে খুঁজে দেওয়া যাবে। তবে আমি সহ-সমন্বয়ক না, সেই পরিচয়ই দেইনি।
হাসিব আল সজিব বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। রাকিব আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সাবেক সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমি বিষয়টা শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। রাকিব যতদূর বললো, অবসান আগের পরিবহন প্রশাসকের আত্মীয়। তাছাড়া আগের সময়ের প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এখনো কিভাবে থাকে। এই দাবি নিয়ে হয়তো গেছিল।
আরেক সাবেক সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী বলেন, রাকিব আমাকে বলেছিল অবসান ছাত্রলীগে সংশ্লিষ্ট এবং তাকে ট্রান্সপোর্ট কমিউনিটি থেকে সরাতে হবে। সে পরিবহন প্রশাসকের কাছে যেতে চেয়েছিল এটা নিয়ে। পরে গিয়েছে কি-না আমি জানি না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, রাকিব আমাদের সমন্বয়ক প্যানেলের কেউ না।
গ্রুপের অ্যাডমিন খালেকুজ্জামান অবসান বলেন, আনোয়ার স্যারের সঙ্গে আমার কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তিনি প্রশাসক হিসেবে তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি এর বাইরে কিছু না। আমি কারো শেল্টারে কিছু করিনি এবং কোনো রাজনীতিতেই সংশ্লিষ্ট নই। আমি শিক্ষার্থীদের উপকারের কথা চিন্তা করে এসব কাজ করেছি। পরিবহন প্রশাসক আমাকে এসব জানানোর পর আমি গ্রুপের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।
পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, সমন্বয়কারীদের একজন গ্রুপটির অ্যাডমিনকে ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিস্ট সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলে। পরে আমি বিষয়টি অ্যাডমিনকে (অবসান) জানাই। তারপর সে আবেগতাড়িত হয়ে গ্রুপের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। আমি তাকে সরে যাওয়ার জন্য কোনো প্রেসার দেইনি। আমি তাকে (রাকিব) বলেছিলাম, অবসান দক্ষ লোক। সে এসব কাজ ভালো বোঝে। হঠাৎ আমি এমন কাউকে কোথায় পাবো। তখন ছেলেটা আমাকে লোক খুঁজে দেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
একুশে সংবাদ/এ.জে