ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের জেরে ভুক্তভোগীদের চাপে ফেলতে বিভাগের অন্য শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (০২ আগস্ট) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগের সভাপতির কক্ষে পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেদের ভুলের জন্য পরীক্ষা পিছিয়েছে বলে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ— শিক্ষক আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেওয়ায় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরাও তাদের উপর ক্ষেপেছেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে বিপদে ফেলতে বিভিন্নভাবে নিয়মের বেড়াজালে ফেলে পরীক্ষা নিতে টালবাহানা শুরু করেছেন তারা। তবে বিভাগের সভাপতি ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী সূত্রে, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করায় বিভাগের সভাপতি বরাবর গত ২২ জুন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর প্রেক্ষিতে বিভাগ থেকে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত এবং ঘটনা তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে গত ৫ জুলাই গণমাধ্যমে ‘সহকর্মীদের আশকারায় বেপরোয়া ইবি শিক্ষক আজিজ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে আঁতে ঘা লাগে বিভাগটির অন্যান্য শিক্ষকদের। এরপর থেকেই বিভাগের শিক্ষকরা নড়েচড়ে বসেছেন এবং ভুক্তভোগীদেরকে বাঁকা নজরে দেখছেন বলে জানিয়েছেন তারা। সর্বশেষ কোনো কারণ ছাড়াই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা তাদের পরীক্ষা পেছানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এরআগে ওই শিক্ষকের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিক্ষক আজিজের সহকর্মীরা উঠেপড়ে লেগেছিল। তারই এক সহকর্মী ভুক্তভোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য ১৫ হাজার টাকা অফার করলেও তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় ছাত্রীরা। এছাড়া ঘটনা বিভাগের বাইরে না জানাতে দফায় দফায় মিটিং এবং বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগীদের চাপ দেন বিভাগের অন্য শিক্ষকরা। ভুক্তভোগী ছাত্রীরা কথা না শুনে ঘটনা প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে এসব করছেন বলে অভিযোগ ছাত্রীদের। ওই ঘটনার নিরব শাস্তি হিসেবে পরীক্ষা না নেওয়া, আইনের জটিলতা দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং কোনো কারন ছাড়াই পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া বিভাগের সভাপতি ভুক্তভোগীদের বলেছেন, ‘তোমরাই তো ঘটনা ঘটাইলা, নইলে তো এতোদিন এক্সাম হয়ে যেত। এখন তোমরা প্রশাসনে যাও।’ একইসঙ্গে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বর্তমানে ছুটিতে আছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, আজিজ স্যারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ না করার জন্য বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু আমরা তা না শোনায় এখন তারা আমাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপদে ফেলছেন। আজিজ স্যার আমাদের বলেছিল, ‘বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা মানে সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা।’ এরপরেও অভিযোগ করায় তার সহকর্মীরা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করছেন।
আরেক ছাত্রী বলেন, শুরুতে আজিজ স্যারের বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে আনোয়ারুল হক স্বপন স্যার আমাদেরকে বলেছিলেন, ‘শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে নেই’। এরপরও বিভাগের কিছু সিনিয়র শিক্ষক আজিজ স্যারের এসব কর্মকান্ড জেনেও তাকে সমর্থন করে এসেছেন। এখন অভিযোগ করায় বিভাগের শিক্ষকরা প্রতিশোধ নিতে জোটবদ্ধ হয়ে আমাদেরকে বিপদে ফেলছেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা বলেন, তাদের দুইটা কোর্স বাকি আছে। যতদ্রুত সম্ভব কোর্স শেষ করে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলেছে তা সত্য নয়।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিলুফা আখতার বানু বলেন, আমরা অলরেডি তাদের ফর্মফিলাপের ডেট দিয়েছি। তাদের কিছু ক্লাস বাকি আছে সেগুলো শেষ হলেই পরীক্ষা শুরু হবে। আগস্টের মধ্যেই দুইতিনটা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো।
একুশে সংবাদ/এ.জে