ফুটবল খেলায় সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে মারামারির ঘটনার ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ক্যাম্পাস সাংবাদিক। শনিবার বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ভুক্তভোগী এক সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারাসহ শারিরীকভাবে জখম করা হয়।
প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই সাংবাদিকের ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী তিন সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রশিবির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। একইসঙ্গে হামলায় জড়িতদের দ্রুত তদন্তপূর্বক বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শাখা ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে হাতাহাতির সময় সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ ভিডিও ধারণ করতে গেলে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং দলবেঁধে অন্যরা সাংবাদিকদের মারধর শুরু করে। এতে নুর ই আলম ও রবিউল আলমসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা ঠেকাতে গেলে তারাও হামলার শিকার হন। সাংবাদিকদের উপর নির্মম হামলা চালানো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সংস্কৃতির উপর সরাসরি আঘাত। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা ঘটনার দিক পরিবর্তন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একজন নারী শিক্ষার্থীকে ভিকটিম সাজিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালায়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
শাখা ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে হাতাহাতিতে জড়ান বিভাগের সিনিয়র- জুনিয়ররা। এসময় সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে বিভাগের শিক্ষার্থীদের দ্বারা লাঞ্ছিত, মোবাইল কেড়ে নেওয়া ও এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদকর্মীরা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
শাখা ছাত্র শিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থনীতি বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাঁধা এবং মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষাঙ্গনে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর আঘাত। অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ভিডিও করতে গেলে তিন সাংবাদিকদের মারধর করেছে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এক সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত মোবাইল ফেরত দেননি তারা। আহত সাংবাদিকরা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহ (দৈনিক আমাদের বার্তা) একই বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আলম (দৈনিক আজকালের খবর) এবং একই শিক্ষাবর্ষের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নুর ই আলম (বার্তা২৪)। অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন— অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, সাব্বির, আফসানা পারভিন টিনা, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ ও পান্না। একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয়সহ অন্তত ২০-২৫ জন।
একুশে সংবাদ/এ.জে