ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে অর্থনীতি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে জড়ান শিক্ষার্থীরা।
এসময় ভিডিও করতে গেলে এক সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করেন তারা। পরে আরও কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উপরও একজোট হয়ে হামলা চালায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন— অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, সাব্বির, আফসানা পারভিন টিনা, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত ও পান্না। একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয়।
অন্যদিকে ভুক্তোভোগী সাংবাদিকরা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরিফ বিল্লাহ এবং একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আজকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রবিউল আলম এবং একই শিক্ষাবর্ষের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বার্তা২৪ এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুর ই আলম।
ক্যাম্পাস সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের মারামারির ভিডিও করতে গেলে আরিফ বিল্লাহ’র (সাংবাদিক) মোবাইল কেড়ে নেন তাদের এক সহপাঠী আফসানা পারভিন টিনা। তার উস্কানিতে দলবেঁধে তেড়ে এসে সেই সাংবাদিককে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন বিভাগটির অন্য শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের কয়েকজন ঠেকাতে গেলেও তাকে ঘিরে ফেলে দফায় দফায় মারধর করেন অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা।
এসময় আরেক সাংবাদিক নুর ই আলম মারধরের ভিডিও করতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন। পরবর্তীতে একইভাবে আরেক সাংবাদিক রবিউল আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকেও মারধর করেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এভাবে পরপর তিনজন সাংবাদিককে দফায় দফায় মারধরের শেষে ঘটনাস্থলে অন্য সাংবাদিকরা সমাধানের জন্য গেলে তাদের সঙ্গেও বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিক উত্তেজিত হয়ে তেড়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি হট্টগোলের আওয়াজ শুনে মাঠের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছে। তার পাশে আরেক সাংবাদিক ভিডিও করতে গেলে তাকেও ভিডিও বন্ধ করতে বলা হয়। ভিডিও বন্ধ না করায় তাকে এসে একজন লাথি মারে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ফুটবল মাঠে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনাটি আমি সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মোবাইলে ভিডিও করছিলাম। এসময় আফসানা পারভীন টিনা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ঘটনার কারণ জানতে চাইলে একযোগে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে অকথ্য গালাগালি ও শারীরিকভাবে মারধর করে।
আরেক ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক নুর ই আলম বলেন, আমি ভিডিও করতে গেলে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলে মারধর করে। এসময় কয়েকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পরে অন্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালায় তারা। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দৈনিক আজকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রবিউল আলম উপস্থিত হলে তিনিও হামলার শিকার হন। রবিউল আলম বলেন, আমি আরিফকে মারার ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়। তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বলে, “ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে।”
তিনি আরও বলেন, এরপর তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ ইসলাম আমার তলপেটে লাথি মারলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। ঘটনাস্থল থেকে আমাকে কয়েকজন উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পাঠান। এরআগে, গত ২০ এপ্রিল বৈশাখীয়ানা মেলায় একটি সংবাদ প্রকাশের পর নাহিদ ইসলাম আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
এবিষয়ে অভিযুক্তদের একজন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের বিভাগের আন্তঃসেশন খেলা হচ্ছিল। তখন বল আউট হওয়া না হওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হলে সেটি সমাধান করা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরেছে তখন আমি কি করব? একথা বলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন। আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আফসানা পারভিন টিনাকে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি।
অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলায় ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের খেলা ছিল। শুনেছি মারামারি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে ঠিক কি হয়েছে তা জানি না। বিষয়টি নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে নিবৃত করি। লিখিত অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেবো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করলে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ছাড় দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের তাদের পেশাগত দায়িত্ব সম্মানের সঙ্গে পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনেরও সহযোগিতা করা উচিত।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে, ঘটনা এখনো শুনিনি। রোববার ক্যাম্পাসে ফিরে দেখি কি করা যায়।
একুশে সংবাদ/এ.জে