ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় বিষধর সাপের কামড়ে জাহাঙ্গীর আলম (২৫) নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়ার আগেই তার প্রাণ ঝরে যায়, আর সেই সঙ্গে উঠে এসেছে উপজেলাস্থ স্বাস্থ্যসেবার চরম বাস্তবতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও গতিয়ার বাজারের মুদি দোকান ‘জাহাঙ্গীর স্টোর’-এর মালিক জাহাঙ্গীর আলম তুষার প্রতিদিনের মতোই দোকানের ক্যাশ টেবিলে বসে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে একটি বিষধর সাপ এসে তার ডান পায়ে কামড় দেয়। বিষাক্ত সাপটি চোখে পড়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজনকে ডাকেন।
পরিবার ও স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পথেই তার অবস্থার অবনতি হয় এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মরহুম আজিজুল মেম্বারের নাতি ও আবুল হোসেনের ছোট ছেলে। আট মাস আগে তিনি ভালুকা পৌরসভার কাঠালী এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলামের মেয়ে ইকরার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
একজন প্রিয় মানুষের এমন বিদায়ে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব সবাই বাকরুদ্ধ ও শোকে মুহ্যমান।
রবিবার সকাল ১০টায় আজিজুল মেম্বারবাড়ি মোড়ে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভালুকায় ব্যাপক জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলায় বিষধর সাপের উপস্থিতি থাকার পরও ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এন্টিভেনম (সাপের বিষের প্রতিষেধক) নেই — যা প্রতিবছর অনেক প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমি নিজের বাবাকে হারিয়েছি সাপে কাটার কারণে, তখনো হাসপাতালে প্রতিষেধক ছিল না। আজ আবার একজন তরুণ প্রাণ হারাল — এটা আর কতকাল চলবে?”
অন্য একজন বলেন, “সরকারি হাসপাতাল যদি এমন একটি জরুরি ওষুধ না রাখতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার আশাটা কোথায় দাঁড়ায়?”
দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভালুকা থেকে ময়মনসিংহে পৌঁছাতে গড়ে ১.৫–২ ঘণ্টা সময় লাগে। আর সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় এই সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই জরুরি ভিত্তিতে ভালুকা উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনম সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
তারা বলছে, “এই মৃত্যু শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয় — এটি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার এক করুণ ব্যর্থতা। এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আগামীকাল আরও একটি তাজা প্রাণ হারিয়ে যাবে।”
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে