বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে দলটির যাত্রা শুরু হয়।
এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি।
দীর্ঘ দেড় যুগ পর অনুকূল পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করছে দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি ফিরে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে চার দশকেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক যাত্রায় বিএনপি কখনো ক্ষমতায় থেকেছে, কখনো রাজপথে আন্দোলনে। বিগত দেড় যুগ রাজপথেই কাটাতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তারা অবিচল ছিলেন। অবশেষে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ প্রবেশ করেছে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে।
আওয়ামী লীগ রাজনীতির বাইরে চলে যাওয়ায় বিএনপির সামনে নতুনভাবে জনগণের কাছে আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটি সাতচল্লিশ বছরে পদার্পণ করছে এমন সময়ে, যখন দীর্ঘ রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর রাষ্ট্রক্ষমতা হাতছানি দিচ্ছে। তবে গণঅভ্যুত্থানোত্তর বাস্তবতায় বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। এর মধ্যে প্রধান হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, তরুণ ভোটারদের আস্থা অর্জন এবং ঘোষিত ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর করাও দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠা ঘোষণা দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে দলটিকে। ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। তার দৃঢ়চেতা ও আপসহীন নেতৃত্বে বিএনপি দ্রুত সংগঠিত হয়। স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এক দশকের মধ্যে ১৯৯১ সালে বিপুল সমর্থনে সরকার গঠন করে বিএনপি। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে দলটি। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আরও সুসংগঠিত হওয়ার পথে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচি: ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে ছয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রোববার আলোচনা সভা করেছে। আজ ১লা সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া এদিন সারা দেশে সব মহানগর ও জেলায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালি হবে। ২রা সেপ্টেম্বর দুপুর ২টায় ঢাকায় নয়াপল্টনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি হবে। ৩রা সেপ্টেম্বর দেশের সব উপজেলা ও পৌর এলাকায় আলোচনা সভা ও র্যালি হবে। ৪ঠা সেপ্টেম্বর সব মহানগর, জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান হবে। ৫ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি গোলটেবিল আলোচনা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বিএনপি’র পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে