বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও জনতার টানা ৩৬ দিনের গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটায়নি; বরং এটি দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের অংশ। এই সময়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন কিংবা স্থায়ী অঙ্গহানি বরণ করেছেন— তারা সবাই জাতির বীর।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে সালাহউদ্দিন জানান, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও পুলিশি নির্যাতনসহ বিভিন্ন প্রতিহিংসামূলক হামলায় ৭ হাজার ১৮৮ জন ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০৯ জন গুম হয়েছেন, যাদের অনেকে আজও ফিরে আসেননি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৩ জন। শুধু জুলাই আন্দোলনেই ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি, এবং ৫ শতাধিক মানুষ দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি; হাসপাতালের রেজিস্টার নেই, গণকবরের অবস্থান অজানা। তারপরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। শহীদ ও আহতদের জন্য রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং সেই দায়িত্ব পালনে বিএনপি বদ্ধপরিকর।
সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কেবল রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন করলেই হবে না; যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এবং যারা নাগরিক, উভয়ের মানসিক ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার প্রয়োজন। জনগণকে শুধু সরকারের ওপর নির্ভর না করে নিজেরাও দেশের জন্য করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে মানবিক, কল্যাণমুখী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যারা আন্দোলনে অন্ধত্ব বা অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা যেন কাঙ্ক্ষিত সমাজ ও রাষ্ট্র দেখতে পারেন— সেটাই লক্ষ্য।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জোর দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী শাসন যেন ফিরে না আসে, সে জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে