আবু সাঈদের বিচার চেয়ে সরব থাকার পরও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে পুলিশ গ্রেপ্তার করায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গত ১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় ১০ মাস আগে ছাত্র-জনতার ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ছমেস উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় শিক্ষক মাহমুদুল হককে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে ১১, ১৭ ও ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে শিক্ষক মাহমুদুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে এবং আবু সাঈদের হত্যার বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনটি পোস্ট করেন।
১১ জুলাই তিনি লিখেন: “মহামান্য হাইকোর্টের আংশিক রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কোটা সংস্কারের সুযোগ রয়েছে। কারণ, রায়ে বলা হয়েছে:
ক. সরকার কোটা কমাতে বা বাড়াতে পারে।
খ. কোটায় নির্ধারিত পদ না পূরণ হলে মেধাক্রম থেকে শূন্যপদ পূরণ করা যাবে।
শিক্ষার্থীরা যুক্তিসঙ্গতভাবে কোটা সংস্কারের পক্ষে। সরকার চাইলে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আপিল বিভাগ যেহেতু এক মাসের জন্য হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দিয়েছে, তাই সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। স্থিতাবস্থা মানে, যেভাবে বিষয়টি আছে সেভাবেই থাকবে।”
১৭ জুলাই তিনি আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখেন: “পুলিশ সাঈদকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীদের থেকেও ঘৃণ্যভাবে! আমার শিক্ষার্থীকে গুলি করা হয়েছে ক্যাম্পাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে। পুলিশ এ সাহস কোথা থেকে পেল? কে অনুমতি দিল? ক্যাম্পাস সাঈদের, পুলিশ বহিরাগত। তার দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ টার্গেট করে পরপর গুলি চালিয়েছে। এটা ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমি অনুতপ্ত— আমি তখন রাস্তায় ছিলাম, বন্দুকের নল চেপে ধরতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করো সাঈদ।”
১৮ জুলাই তিনি লিখেন: “পুলিশের তদন্ত মানি না, বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। সাঈদকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। পুলিশের অপরাধের তদন্ত পুলিশ করবে— এটা সাঈদের রক্তের সঙ্গে প্রহসন। এই তদন্ত কমিটিকে আমি প্রত্যাখ্যান করছি।”
এ বিষয়ে ২৪-এর ছাত্র আন্দোলনে সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ বলেন,
“আমার শিক্ষক মাহমুদুল হক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সাবেক সাংবাদিক এবং ইউএনবি’র সাব-এডিটর ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন।
তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি প্রহসনমূলক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এর আগেও ৫ আগস্টের পর এটি তৃতীয়বারের মতো মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হলো, যেখানে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
তিনি আরও বলেন: “আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর মাহমুদুল স্যারই প্রথম শিক্ষক যিনি সরব হন। তিনি পুলিশের তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। এছাড়াও, তিনি ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সাবেক উপাচার্য ড. কলিমুল্লাহর দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তিনি দৃঢ় ভূমিকা পালন করেন। তার এই স্পষ্টবাদিতাই আজ তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু ফেসবুকে লিখেন: “প্রহসনের মামলা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার! মাহমুদুল স্যারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন: “মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্টরা কিছু বুঝতে না পারেন, তাই পাশের তাজহাট থানায় না করে হাজিরহাট থানায় মামলা করা হয়। একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ছুটির দিনে তাকে আটক করা হয়েছে।”
একুশে সংবাদ/বেরোবি.প্র/এ.জে