জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সংক্রান্ত এক নতুন অধ্যাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রায় ৪০০ জন এমএনএ ও এমপিএকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পুনঃপরিচিত করা হয়েছে। এর ফলে এদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে পূর্বের স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে।
গত ৩ জুন রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেবল প্রবাসী সরকারের সদস্যরাই নন, আরও চারটি শ্রেণির ব্যক্তি যারা এর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, তাদের সবাইকে এখন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে ধরা হবে।
এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন:
১. বিদেশে অবস্থানরত সেইসব বাংলাদেশি পেশাজীবী, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, দূত ও সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরা।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিক যারা যুদ্ধকালীন প্রচারে যুক্ত ছিলেন।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
২০২২ সালে পাস হওয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে এদের সবাইকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন অধ্যাদেশে তাদের স্বীকৃতি পরিবর্তন করে সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি বাতিল করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও সরকারের দাবি, আইনের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে কার্যকর হয়েছে।
অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার গণ্ডি আরো নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুসারে, বীর মুক্তিযোদ্ধা বলতে সেইসব মানুষকে বোঝানো হবে যারা ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন—যার মধ্যে মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নেওয়া, অস্ত্র হাতে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সক্রিয় লড়াই করা অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার, নার্স এবং ফিল্ড হাসপাতালের কর্মীরাও এই সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞাও নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে একে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার অর্জনের লড়াই হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ / চ.ট/এ.জে