সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে আগের ৯টি বিতর্কিত ধারা বাতিল করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। একইসঙ্গে এই অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে প্রথমবারের মতো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, আগের সাইবার আইনের যেসব ধারায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছিল, সেগুলোই মূলত বাতিল করা হয়েছে। মোট মামলার ৯৫ শতাংশই এই ধারাগুলোর আওতায় দায়ের হয়েছিল, যা নাগরিক হয়রানির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এসব মামলা এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নারী ও শিশুর প্রতি সাইবার নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মাত্র দুটি নির্দিষ্ট অপরাধকে অপরাধ হিসেবে রাখা হয়েছে। একটি হচ্ছে নারী ও শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কনটেন্ট প্রকাশ বা হুমকি, আরেকটি ধর্মীয় ঘৃণা ছড়িয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া। এসব অপরাধে মামলা হলে তা আমলি আদালতে যাবে। সেখানে বিচারক যদি দেখেন মামলার কোনো ভিত্তি নেই, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।
ধর্মীয় ঘৃণার বিষয়টি যাতে ভুল ব্যাখ্যা না হয়, সে জন্য এর সংজ্ঞা কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল।
এছাড়া যে ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় পতাকা ও শহিদদের নিয়ে কুৎসা বা বিভ্রান্তি ছড়ানো,মানহানিকর তথ্য প্রকাশ,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এমন বক্তব্য,আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য প্রকাশ ইত্যাদি।
এই ধারাগুলোতে আগেও বহু হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। বিশেষ করে সাংবাদিকরা এসব আইনের কারণে বারবার আইনি জটিলতায় পড়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “এই অধ্যাদেশের খসড়া কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হতে পারে।”
এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা এবং বিচারকদের ভূমিকাই নির্ধারণ করবে এর কার্যকারিতা—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :