নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ২০০৪ সালের ২৩ মে লঞ্চডুবির ঘটনাটি দুর্ঘটনা, এটি ঠিক নয়; এটি অবহেলা। নৌদুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোর অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নদীর অবদানকে নিয়ে কোন চলচ্চিত্র, নাটক তৈরি হয়নি। নদীকে নিয়ে অবহেলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে এসে বলেছিলেন ‘নদীর নাব্যতা কমে গেছে, এর প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সাতটি ড্রেজার থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ’র ডেজার বহরে আটটি ড্রেজার হয়নি। এটাই বাস্তবতা। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে ভাবা হয়নি। ২০০৪ সালে লঞ্চডুবির ঘটনা দুর্ঘটনা নয়; এটা অবহেলা। আবহাওয়া বার্তা দেয়া হয়নি। তৎকালিন সরকার নৌদুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছে। দেশের ক্ষেত্রেও অবহেলা করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প নয়; আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র পাচারের গল্প শুনিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতা বিরোধি চক্র ক্ষমতায় থেকে বাংলার মানুষের প্রতি অবহেলা করেছে। বাংলার মানুষের ওপর রোলার চালিয়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেছে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে নদী, প্রাণ-প্রকৃতি ও সমুদ্র সম্পদ ভিত্তিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’ আয়োজিত ‘‘নদী আমাদের মা’’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘নোঙর ট্রাস্ট’ এর চেয়ারম্যান সুমন শামস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, নদী গবেষক বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ, মেরিন হাইস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নৌস্থপতি মোঃ শামসুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ^াস এবং রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময় নৌ ও রেল পথকে বাদ দিয়ে সড়কের জন্য অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো- ব্যবসায়িদের লাভবান করা আর মুনাফার একটি অংশ সরকারের লোকদের দেয়া। সাশ্রয়ি নৌ ও রেল পথের প্রতি সজাগ ছিলনা। নৌ ও রেল পথের জন্য ভাবেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ নির্বাচনি ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এলক্ষ্যে ৩৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছে আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এর আগে কোন রাজনৈতিক দল দেশের নৌপথ তৈরির কথা ভাবেনি। সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ঢাকার চারপাশের নৌপথ উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। সেই নৌপথ রক্ষা করতে পারিনি। ঢাকার চারপাশের নদীর ওপর নেভিগেশনাল ছাড়পত্র ছাড়া ১৪টি লো-হাইটের ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন ছাড়া নৌপথে নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণ করা যাবেনা।’ আওয়ামীলীগ, শেখ হাসিনা এবং নৌকা ‘নদী ও নৌপথ’ নিয়ে ভেবেছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামি অক্টোবর-নভেম্বরে একটি ক্রুজ ভেসেল সংগ্রহ করতে যাচ্ছি যা দিয়ে বিদেশি পর্যকদের সেবা দেয়া যাবে। বাংলাদেশের নেভাল আর্কিটেক্টদের নির্মিত জাহাজ বিদেশে যাচ্ছে। নেভাল আর্কিটেক্টদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। নৌসেক্টরের মাধ্যমে যাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে যেতে না পারে সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিদেশি জাহাজ মনিটরিং ও দিক নির্দেশনার জন্য আটটি লাইটহাউজ (বাতিঘর) নির্মাণ করা হচ্ছে। জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ভিটিএমএস) চালু করা হয়েছে। নদী তীরের দখল প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক্ষত্রে কোন কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। বিএনপি-জামাত থাকলে কমপ্রোমাইজ করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসি পদক্ষেপের কারণে সম্ভব হয়েছে। নদী তীরে ওয়াকওয়ে (হাটারপথ) তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজর মানুষ হাটতে পারছে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিঘেরা বাংলাদেশের নদীগুলো আমাদের মায়ের মতো। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। নদীগুলো মানুষের রক্তের শিরার মতো। শিরাতে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ মারা যায়। তেমনি নদীগুলোর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশও থেমে যাবে। নৌনিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছি। কাজ করছি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৩ মে চাঁদপুরের মেঘনায় ‘এমভি লাইটং সান’ নামের লঞ্চ ডুবির ঘটনায় ২০০৫ সাল থেকে নোঙর ট্রাস্ট ২৩ মে-কে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :